২০২৩-২৪ অর্থবছর
অর্থসংকট-রাজনৈতিক অস্থিরতায় কমেছে এডিপি বাস্তবায়ন
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থসংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৮০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ২ লাখ ৩ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। আলোচ্য অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি।
গত অর্থবছরে এডিপির যে ২০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়নি টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি। পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পর এত কম এডিপি আর কোনো অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়নি। এর আগে সর্বনিম্ন ৮০ দশমিক ৬৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে। গতকাল রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইএমইডি এডিপি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করে গণভবনে পাঠিয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির জন্য। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই রিপোর্ট অনুমোদনের সময় পাননি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর গণভবনে লুটপাট ও আগুন দেয়া হলে এডিপির ওই রিপোর্ট পুড়ে গেছে বলে মনে করছে আইএমইডি। এখন নতুন করে রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে এটি চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, এবার ৮০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে। আমরা এরই মধ্যে রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছি, দুয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করতে পারবো। আইএমইডি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে এতদিনের হিসাবে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে সর্বনিম্ন ৮০ দশমিক ৬৬ শতাংশ আরএডিপি (সংশোধিত এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছিল। তবে সবশেষ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে আরএডিপি বাস্তবায়নের হার ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরের চেয়েও কম। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশ কমে যায়। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিকে এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল। ওই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল সরকার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে যা ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল সংশোধিত বরাদ্দের ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আলোচ্য (২০২৩-২৪) অর্থবছরে এডিপির সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ বরাদ্দের মধ্যে ৪৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ছিল সরকারি তহবিল থেকে এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যায় ৩১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে। এ বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এডিপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় পায় ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। সেতু বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাকি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় প্রতিরক্ষা, কৃষি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। প্রতিবারের মতো মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুতে বড় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।