আরো তিনটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার পরামর্শ

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যতে কমপক্ষে আরো তিনটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার পরামর্শ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি ভিত্তিতে পাঁচটি করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদে দেশের সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারসহ ১৯টি বিষয়ে পরিবর্তন ও সংশোধনের দাবি জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন তারা। নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পর সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন শুরু করলে, তখন দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ।

জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় নিহতদের তালিকা তৈরি, পরিবারকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। আহতদের সুচিকিৎসাসহ পরবর্তীতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। দ্রুত জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শান্তির ব্যবস্থা করা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা। সুদূরপ্রসারী করণীয় হিসাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করে সুজন। সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য টার্ম লিমিট নির্ধারণ, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে আসন বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধানে পরিণত করতে চায় সুজন। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিচারের প্রক্রিয়াটা শুরু করা দরকার। যারা আর্থিক লুটপাট করেছে তাদের তদন্ত করতে হবে। জাতিসংঘের সহায়তায় নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। ডাকাতি এড়াতে ছাত্র তরুণদের মহল্লায় পাহারা দেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ রকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ১ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিত্ব আসেনি। ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি একটা বড় জায়গা ছিল। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব সে অর্থে দেখতে পাচ্ছি না। এটাকে আরো এক্সটেন্ড করা সম্ভব। ক্ষমতাকে চোখে চোখে রাখতে হয়। ক্ষমতাকে নজরদারিতে রাখতে হয়। ক্ষমতাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। জবাবদিহিতার কাঠামো রাখতে হবে। বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার তাকেও চোখে চোখে রাখতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, তাদের দুয়েকজনকে আমি দেখলাম ক্ষেপে যাচ্ছেন। কতদিন তাদের মেয়াদ এ প্রশ্নে। ক্ষেপে যাওয়া যাবে না। এই প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে। যতদিন আমাদের লাগে, এটা উত্তর হতে পারে না। উত্তর হবে যত দ্রুত পারি আমরা সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেব।