দ্রব্যমূল্যে অস্বস্তিতে ক্রেতারা

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ব্যাহত হয় পণ্য পরিবহন। সরবরাহ সংকটের প্রভাব পড়ে বাজারে। ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও দ্রব্রমূল্য নিয়ে এখনো অস্বস্তি কাটেনি ক্রেতাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া এখনো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। আন্দোলনের সময় চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছিল, এখনো তেমনই রয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। যা আগে চেয়ে ১০ টাকা বেশি। তবে ভারত থেকে আমদানি করা কিছু পেঁয়াজ এখনো ১০০ থেকে ১১০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজের মান দেশি পেঁয়াজের চেয়ে কিছুটা নিম্ন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের চড়া দাম এখনো একই অবস্থায় রয়েছে। বাজারে মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা ৭৫, পাইজাম ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তি। মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়।

প্রধান এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল দরিদ্র মানুষরা। মামুন হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কমেছে, ডিমণ্ডমুরগিরও কমেছে। কিন্তু চালের দাম কমে না। আসলে সিন্ডিকেট করে একবার দাম বাড়ালে আর কমানো হয় না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা তথা মিল ও পাইকারি পর্যায়ে তদারকি করলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে।

একজন চাল বিক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখন পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক। পণ্য আনা-নেওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবু কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা চালের দর বাড়িয়েছেন। সরকার মিলগুলোতে তদারকি করলে দাম কমে আসবে।

চাল-পেঁয়াজে অস্বস্তি থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমছে। সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁপে, ১৫-২০ দিন আগে পেঁপের কেজি ছিল ৭০ টাকা। একইভাবে পটল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। এতদিন এসব সবজির দাম ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা দেখা গেছে বরবটি, বেগুন ও শসার কেজি। সপ্তাহ তিনেক আগেও এসব সবজির কেজি ১৫০ টাকা ছুঁয়েছিল। কাঁচা মরিচের কেজি কোথাও ৩০০ আবার কোথাও ৩৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এছাড়া যেসব সবজির দাম কিছুটা বাড়তি সেই তালিকায় আছে করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৭০, টমেটো ১৫০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা এবং কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ মাছের ভরা মৌসুম চলছে এখন। ফলে দাম অনেক কম থাকার কথা। কিন্তু সে তুলনায় কমেনি ইলিশের দাম। যদিও বাজারে মাছের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের এখন গুনতে হচ্ছে কমবেশি দেড় হাজার টাকা। এছাড়া আধা কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

এদিকে, সবজির দাম কেমন- এমন প্রশ্ন করতেই রাজধানীর রামপুরা এলাকার এক সবজি বিক্রেতা জানান, শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে আসে, দরদাম জানতে চায়। এছাড়া বেশি দামে যেন সবজি বিক্রি করা না হয় সে বিষয়ে তাগাদা দিয়ে যায়। পাশাপাশি এখন কারওয়ান বাজার থেকে স্থানীয় বাজারের কোথাও চাঁদা দিতে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে।

আসলেই কী সবজির দাম কমেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, বাজারে সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে এ কথা ঠিক। এর মূল কারণ হলো পথে পথে যে সবজি পরিবহনের চাঁদাবাজি ছিল, কারণ বাজারেও বিভিন্ন জায়গায় যে টাকা দিতে হতো সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে না। যে কারণে এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে সবজির বাজারে। এজন্যই সবজি বিক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া এলাকাভিত্তিক স্থানীয় বাজারগুলোতে শিক্ষার্থীরা এসে বাজার মনিটরিং করছে।