আন্দোলনে নিহত পোশাক শ্রমিকদের হত্যার বিচারের দাবি

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী, দ্রুত তাদের আয়বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা সুদূরপরাহত বলে মন্তব্য করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।

বক্তারা বলেন, বৈষম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশের পোশাকশিল্প। অথচ এই শিল্পে চলে শ্রমিক ঠকানোর প্রতিযোগিতা। একদিকে পোশাক কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে বিশাল বিশাল কারখানা এমনকি শিল্প গ্রুপের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রেতারা উৎপাদন খরচের ১০ গুণ মুনাফা করছে। ফলে প্রতি মুহূর্তে স্ফীত হচ্ছে কারখানার মালিক আর ক্রেতাদের সম্পদ আর ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় পোশাক-শ্রমিকরা অতিরিক্ত শ্রমের বিপরীতে পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে অনেক কম বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে সামাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তারা আরও বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের প্রশ্রয়ে গার্মেন্টস মালিকদের গড়ে তোলা শ্রমিক ঠকানোর সিন্ডিকেট ভেঙে আধুনিক দাসত্বের জীবন থেকে একটি মানবিক জীবনে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা থেকেই পোশাকশ্রমিকরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে এককভাবে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়া এই অন্তর্বর্তী সরকারকে শহীদ শ্রমজীবীদের বৈষম্য নিরসনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি পুনর্নিরধারণ করতে হবে জানিয়ে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সময়ে রেশন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থান ও মজুরি আন্দোলনে নিহত পোশাক-শ্রমিকদের হত্যার বিচার ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এত দিন যারা স্বৈরাচারের সহচর হিসেবে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে, নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে, তাদের অনেকে এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আবেগকে পুঁজি করে নানা রূপে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে, এসব বর্ণচোরার বিষয়ে সাবধান হতে হবে।

সংগঠনের নেতারা বলেন, চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করতে হবে সন্ত্রাস, দালালি, প্রতারণা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, দলবাজি, সাম্প্রদায়িকতাসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিটি শিকড়কে। মজুরি নির্ধারণের মানদ- নির্দিষ্ট করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং প্রতি দুই বছরের মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী, তাদের দ্রুত তাদের আয়বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা সুদূরপরাহত। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুলের সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি খালিদুজ্জামান লিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।