আরইবির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্য নিরসনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু তাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে টালবাহানা করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তাদের প্রধান দুটি দাবি হচ্ছে- আরইবি-পল্লী বিদুৎ সমিতি একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল অনিয়মিত কর্মচারীকে নিয়মিত করতে হবে। দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অভিমুখে ‘লং মার্চ’ করে অবস্থান করেন শতশত কর্মী। তাদের আন্দোলনের মুখে আরইবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও পল্লী বিদ্যুতের সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়কের উপস্থিতিতে সব পক্ষ ছয়টি দাবি পরেদিনই বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেগুলো হচ্ছে- মন্ত্রণালয়ের রিফর্ম কমিটির রিপোর্ট দাখিল না হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের বদলি বন্ধ থাকবে। সকল শৃঙ্খলা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ২ জন জিএম ও ৪ জন ডিজিএম এর বদলি স্থগিত থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার বন্ধ থাকবে। ২ মাস এর মধ্যে পবিস এর অস্থায়ী কর্মচারিদের কমিটির রিপোর্টের পর স্থায়ী করার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মচারীদের অতিরিক্ত দিনের কাজের জন্য ভাতা প্রদানের প্রস্তাব জিএম বাপবি বোর্ডে পাঠাবেন। এছাড়া আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের মূল ২ দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ায় আন্দোলন স্থগিত করেন কর্মচারিরা। কিন্তু ৬ দিন পেরিয়ে গেলে আন্দোলনের মুখে নেয়া ৬ দফা সিদ্ধান্ত এখনও আরইবি বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ কর্মীদের। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।
এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সমন্বয়করা বলছেন, আন্দোলনের মুখে ৬ দফা সিদ্ধান্ত পরদিনই বাস্তবায়নের কথা বলেও ইচ্ছাকৃতভাবে আরইবি তা করেনি। এর মাধ্যমেই তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব ফুটে উঠেছে। তাদের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের আবারো আন্দোলনে নামতে বাধ্য করছে। আমরা আগামী সপ্তাহে আবারো আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২টি দাবি বাস্তবায়নপূর্বক দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা অব্যাহত রাখা এবং গ্রামীণ জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আধুনিক ও টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে অতি দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। অন্যথায়, সর্বাত্মক কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিলে দেশের ১৪ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ দুর্ভোগের শিকার হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা। এই আন্দোলনে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছেন, বিবাড়ীয়া পবিস এর ডিজিএম মো: আসাদুজ্জমান ভূঁইয়া, ঢাকা-৩ এর এজিএম আবদুল হাকিম, নেত্রকোনা পবিস এর মো মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা-২ এর এজিএম মোঃ সালাউদ্দিন,ঝালকাঠি পবিস এর এজিএম ইয়াসির আরাফাত, কুমিল্লা-২ এর এজিএম অনিক প্রধান এবং নারায়ণগঞ্জ-১ এর এজিএম জাফর সাদিক।
সমন্বয়ক ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভূইয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মচারী লং মার্চ করে আরইবির সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনের মুখে ৬টি বিষয়ে আরইবি, সেনাবাহিনী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও পল্লি বিদ্যুতের সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়করা একমত হন। পরদিনই এটা বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তারা টালবাহানা শুরু করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সকল পক্ষ একমত হওয়ায় আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬টি বিষয় বাস্তবায়ন না হওয়ায় আন্দোলনরত কর্মীরা আবারো আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেন। আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
আরেক সমন্বয়ক এজিএম আবদুল হাকিম বলেন, সারাদেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ৪৭ বছর যাবৎ বিদ্যমান বৈষম্য, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি চায়। বার বার ২ দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েও তা করা হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘লং মার্চ টু আরইবি’ কর্মসূচি পালনের সময় ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিকভাবে আরইবি কর্তৃক রিফর্ম কমিটির প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত সকল হয়রানিমূলক বদলি স্থগিতসহ ৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আরইবির চেয়ারম্যান কর্তৃক পরবর্তী কর্মদিবসে লিখিত অফিস আদেশ করার স্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও নানান বাহানায় অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং গ্রাহক সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল (মিটার, সার্ভিস তার, কাটআউট ইত্যাদি) সরবরাহ বন্ধ করে গ্রাহক হয়রানি বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতি বিক্ষুব্ধ করার নীল নকশা তৈরী করেছে। যার ফলে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শতভাগ কর্মীর মনে চরম অসন্তোষ ও তীব্র ক্ষোভ বিরাজমান থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাথে সকল ধরনের তথ্যপ্রবাহ ও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন মুহূর্তে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আরইবি চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।