মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে মাত্র দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তার পরিবার এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
যারা ছিলেন সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে : এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, বেনজীর আহমেদ এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তারা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শ্রমিক পাঠিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন।
অতিরিক্ত ফি আদায় : বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ছিল ৭৯ হাজার টাকা, কিন্তু সিন্ডিকেটটি প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নিয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ফলে দেড় বছরে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও সেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ছিল মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত ফি হিসেবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সিন্ডিকেটের পকেটে ঢুকেছে।
দুদকের তদন্ত : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্যদের ভূমিকা : সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, কাশমেরী কামাল, নাফিসা কামাল, বেনজীর আহমেদ এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা : অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়া অনেক শ্রমিক সঠিকভাবে কাজ পাননি। অনেকেই খালি হাতে ফিরে এসেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্বিষহ, মানবেতর এবং অমর্যাদাকর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদের ভূমিকা : সিন্ডিকেট তৈরিতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন ওরফে স্বপন, ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম, এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তারা সবাই তাদের নিজ নিজ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছেন এবং অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং তার পরিবারসহ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা অন্যান্য সাবেক সংসদ সদস্যরা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।