সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে মোহাম্মদ পারভেজ (৩৬) নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আরো ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকার ছালেহ আহমদের ছেলে। মামলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এসরারুল হক, মহেষখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেলোয়ার, যুবলীগকর্মী জাফর, সিটি কর্পোরেশনের জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চসিকের চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নূর মোস্তফা টিনুসহ ৩৪ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জন এ মামলায় আসামি হিসেবে আছেন।চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে তিন জনকে নিহত করার ঘটনায় তানভীর ছিদ্দিকী নামে নিহত একজনের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তপূর্ব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী দুপুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ ‘শাট-ডাউন’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল যোগে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। একই দিন বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের নির্দেশে ও হুকুমে মামলার ৩ থেকে ৩৪ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি বেআইনী তাহাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে তানভীর ছিদ্দিকী গুলিবিদ্ধ হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। একই ঘটনায় একই সময়ে একই স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার মুদির দোকানের কর্মচারী পথচারী সাইমন প্রকাশ মাহিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে মন্ত্রী-এমপি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ ও স্থানীয় নেতাদের আসামি করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।