সংবাদ সম্মেলনে বিপিএ সভাপতি

মুরগির বাচ্চা-ফিডে বছরে ৫ হাজার ৯২০ কোটি লোপাট

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য সারা দেশে মুরগির বাচ্চা-ফিডের দাম বাড়িয়ে বছরে ৫৯২০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিপিএ আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সুমন হাওলাদার বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি সিন্ডিকেট করে বছরে ফিড ও মুরগির বাচ্চায় অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করে লোপাট করছে। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের। অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে একচেটিয়া ভাবে ডিম ও মুরগির বাজার বহুজাতিক কোম্পানির হাতে চলে গেছে। বিপিএ সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের নিয়ে কাজ করে আসছে। আমরা ডিম মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখার চেষ্টা করেছি। সবসময় কর্পোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১ কেজি ফিডের দাম ৪০-৫০ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ২৫-৩৫ টাকা। তাদের ১টি ডিমের উৎপাদনে খরচ ৫ টাকা। আর ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ৭৬-৮৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমাদের দেশে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে ১ কেজি ফিডের দাম ৬০-৭২ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৬০-১০০ টাকা, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ দশমিক ২৯ টাকা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫৫-১৭০ টাকা, আর ১ কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৪০-২৬০ টাকা। এখন বর্তমানে উৎপাদন খরচের বিপরীতে প্রতি কেজি মুরগিতে ৪০-৬০ টাকা পর্যন্ত লস গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বছরে ফিডের চাহিদা ১ কোটি ২০ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৮০-৮৭ লাখ টন। আমরা যদি সর্বনিম্ন প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেশি ধরে হিসাব করি তাহলে প্রতি টনে ৫ হাজার টাকা হয়। আর ৮০ লাখ টনে বছরে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে ফিড সিন্ডিকেট। আর এর খেসারত দিচ্ছে ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় ফিডের উপাদানের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই দাম বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এসময় প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে টিকিয়ে রাখতে ও ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্য মূল্যে ডিম ও মাংস সরবরাহের জন্য ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে- পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও খামারিকে বাংলাদেশের সকব ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দিতে হবে। একদিন বয়সের সব মুরগির বাচ্চার সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৩০-৫০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। সব ধরনের পোল্ট্রি ফিডের ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ২৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। কর্পোরেট গ্রুপকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, ডিম ও মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সব পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও খামারিকে প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে আইডি কার্ড দিতে হবে। সরকারিভাবে বাণিজ্যিক ফিড মিল ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি চালু করতে হবে।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকারসহ অন্যরা।