জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্দলীয় শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোব মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকসহ সব রাজনীতি বন্ধের দাবিও জনান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটায় আয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আয়োজিত বিক্ষোব মিছিল ও মানববন্ধনে বক্তারা এসব দাবি জানান। পরে বিক্ষোব মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে কলা ভবন ও বিজ্ঞান অনুষদ প্রদক্ষিণ করে ভাস্কর্য চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভাড়াটিয়া ভিসি আসলে, গেইটে তালা ঝুলবে,’ ‘জবি থেকে ভিসি চাই, দিতে হবে-দিতে হবে’ শ্লোগান দেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক কামরুল ইসলাম জুয়েল ও আতিয়ার রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিঠুন মিয়া, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফা হাসান, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান সাদি প্রমুখ ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল কাদের প্রমুখ। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন নির্দলীয় উপাচার্য দিতে হবে। সব প্রকার ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে যিনি মেরুদণ্ড সোজা করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন, এ রকম উপাচার্য দিতে হবে। জবির বাহির থেকে উপাচার্য আসলে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে। এ সময় বহিরাগত উপাচার্যকে কোন ধরনের সহযোগিতা না করারও ঘোষণা দেন তারা।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, জবিতে এক ঝাঁক যোগ্য শিক্ষক সমাজ আছে, কিন্তু বারবার সেই শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখন থেকে সব উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক পদে নিজস্ব শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। সব শিক্ষক নিয়োগ জবি থেকে হতে হবে। আমরা আর ভাড়াতে ভিসি (উপাচার্য) চাইনা, কোনো ভাড়াতে শিক্ষক-কর্মকর্তা চাই না। শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে সক্ষম, এরকম যোগ্যতা সম্পন্ন নির্দলীয় ভিসি (উপাচার্য) চাই। কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সেকশন অফিসার পর্যন্ত সব পদে জবি শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, এ বিশ্বিবদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগ আনার জন্য যদি রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হই, তাহলে রক্ত দিবো। তবুও মাঠ ছাড়বো না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য সমস্যা-সংকট আছে। সেই সমস্যা সমাধানে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিভাবক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান সাদী বলেন, শিক্ষকদের শুধু বেতন দেয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলেছে। তারা কিছু নিয়ম কানুন দিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখন আমরা নিজেরা নিজেদের বিশ্বিবদ্যালয়ের উন্নয়ন করতে চাই। আমাদের নিজেদের বিশ্বিবদ্যালয়ের একটা কালচার আছে, সেই কালচার ও নিয়মকানুনই চলবে। ঢাবির কালচার ও নিয়মকানুন দিয়ে জগন্নাথ আর চলবে না। ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন বলেন, প্রায় বিশ বছর পর আজও বলতে হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। একটা ভবন ছাড়া কিছু হয়নি। না হওয়ার পেছনের কারণ হলো- নেতৃত্বের সংকট ও তথাকথিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্ব। বাহির থেকে এসে সবাই রুটিন দায়িত্ব পালন করে গেছে। রুটিন দায়িত্ব পালন করে বিশ্বিবদ্যালয় পরিচালনা করা যায় না। ঢাকার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এই জগন্নাথে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তিনি আরও বলেন, ঢাবি থেকে ভিসি হিসেবে আসলে, তিনি প্রথমে কে-কেমন, তা বুঝতে ৩ মাস চলে যায়। তারপর সে একটা নিজের মত বলয় গড়ে তুলেন। এভাবে একটা প্রশাসন গড়ে তুলেন। এবার সেই বলয় গড়ে তুলতে দেয়া হবে না।