ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ও আহমদসহ গ্রেপ্তার ৬

সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ও আহমদসহ গ্রেপ্তার ৬

সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, একাত্তর টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রুপা ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটওয়ারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম টানা চারবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদেও ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েলকে গত সোমবার নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এবি তাজুল ইসলাম : গ্রেপ্তার এবি তাজুল ইসলামকে ৯ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করে ডিবি পুলিশ। এ সময় বাদী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৯ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এর আগে রাজধানীর গুলশান থেকে এবি তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে ১৯ নভেম্বর বিকেলে বাঞ্ছারামপুর থানা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছিলেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশ হামলা করলে সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নয়ন গুলিবিদ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেয়ার পথে রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহত নয়নের বাবা রহমত উল্লাহ বাদী হয়ে কনস্টেবল বিশ্বজিৎকে প্রধান আসামি করে এসপি আনিসুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন। তবে ওই মামলা খারিজ করে দেন আদালত। এর আগে, একই বছর ২০ নভেম্বর এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আফজাল হোসেন বাদী হয়ে হত্যা, পুলিশের কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও সরকারি সম্পদের ক্ষতির অভিযোগ একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় ১৭ জন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নাম উল্লেখ্য করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলামকে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন ও তারিকুল ইসলাম রোমা বলেন, ছাত্রদলের নয়নকে আওয়ামী ক্যাডাররা পুলিশের ছত্রছায়ায় হত্যা করেছিল। তখন আদালতে একটি মামলা করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। এই তাজের নির্দেশে মামলাটি খারিজ হয়। এখন মুক্ত পরিবেশ হওয়ায় পুলিশের মামলায় ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আহমদ হোসেন ও সোহায়েল : রাজধানীর পল্টনে মুদিদোকানদার নবীন তালুকদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সাংসদ আহমদ হোসেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েলকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জসীম উদ্দিন এ আদেশ দেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার আহমদ হোসেন ও মোহাম্মদ সোহায়েলকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। এই দুজনের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। মোহাম্মদ সোহায়েল একসময় র‍্যাবের মুখপাত্র ছিলেন। তিন গতকাল আদালতে বলেন, ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আহমদ হোসেন ও মোহাম্মদ সোহায়েলের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নবীন তালুকদার হত্যার ঘটনার সঙ্গে এই দুই আসামি জড়িত।

শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা দম্পতি আটক করা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা দম্পতি গতকাল শাহজালাল বিমানবন্দরে যান। তাদের সঙ্গে এক কন্যাও ছিল। তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটযোগে (টিকে-৭১৩) ইস্তানবুল হয়ে ফ্রান্স যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু সিটি এসবির ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পরে তাদের ডিবির কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে গত ৮ আগস্ট একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে মুস্তফা আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট থেকে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

গত ১৪ জুলাই চীন সফর শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রুপা। তার প্রশ্নটি ছিল, কোটা আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত অবমাননাকর বক্তব্য রাখা হচ্ছে। এই অবমাননা মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করতে পারছেন না। রাষ্ট্রের কিছু করণীয় আছে কি না? এমন প্রশ্নের পর ফারজানা রুপার ব্যাপক সমালোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ফারজানা রুপাকে চাকরিচ্যুত করে একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

হুমায়ুন কবির : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী সাব্বির হত্যার ঘটনায় অন্যতম আসামি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটওয়ারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সদর মডেল থানার ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা হুমায়ুনকে আটক করেন।

হুমায়ুন কবির সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের মামা।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি বলেন, শিক্ষার্থীরা কবির পাটওয়ারীকে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করেছেন বলে ঢাকারা ভাটারা থানা আমাদের নিশ্চিত করেছে। ভাটারা থানা পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। কবির পাটওয়ারী শিক্ষার্থী সাব্বির হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার আসামি।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে ১০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে সাব্বির হোসেন রাসেল হত্যার ঘটনায় ৯১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ১৪ আগস্ট সাব্বিরের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ঢাকায় আটক হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী এ মামলার ৪ নম্বর আসামি। এছাড়া ৪ আগস্ট দায়িত্বে বাধাসহ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৭০০ জনের নামে মামলা করা হয়। ১২ আগস্ট সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনবিক চাকমা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলার ৫ নম্বর আসামি কবির পাটওয়ারী।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। ধাপে ধাপে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত