বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান চালু আছে, তা বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফরহাদ মজহার বলেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনে যারা এখন উপদেষ্টা হয়েছেন, তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের উপদেষ্টা। এই সংবিধান বাতিল করতে হবে। কেননা, এটি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান। তাই এ সংবিধান তো মেনে নেয়া যায় না। নতুন সংবিধানের আলোকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করিয়ে ড. ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে আমাদের অলিখিত মনোভাবনাগুলো স্থান দিতে হবে। বিএনপি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য সমাবেশ করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। এটি কেন করল? আগে দেশের সংস্কার করতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি বিএনপির আরেকটি ভুল ধারণা। এই চিন্তা থেকে বের হতে হবে। কেননা, গণতন্ত্র চালু থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। তারেক রহমান আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।’ সে যদি আমার বক্তব্য বুঝতে না পারে, তাহলে আমি লন্ডনে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবো বলেও জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দাম্ভিক হাসিনা তার পতনের কিছু দিন আগে ঘোষণা দেয় ‘হাসিনা পালায় না’। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস, এই ঘোষণার মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় নির্লজ্জভাবে সে দেশ থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ এই বিপ্লব, এই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব প্রদান করে। ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে সূচনা হয় এক নবযুগের। বীরের এই রক্তস্রোত, মাতার এই অশ্রুধারা যায়নি বৃথা, যাবে না বৃথা।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এক বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হবে। একটি স্থিতিশীল শৃঙ্খলাপূর্ণ সরকারব্যবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিলুপ্ত গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হলেও অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। স্বৈরাচার পতনের অব্যবহিত পরই এমন কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা দেখেছি, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি এত বড় একটি ঐতিহাসিক অর্জনের গুরুত্বকে ম্লান করে দিতে পারে। এছাড়াও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও সিনিয়র সাংবাদিক এমএ আজিজ।