ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেখ মুজিব তার কৃতকর্মের করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন

মন্তব্য শেহবাজের
শেখ মুজিব তার কৃতকর্মের করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি বলেছেন, যিনি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি অবশেষে তার করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে সম্প্রতি শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করে তিনি একথা বলেন। গত বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, যিনি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি তার করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন। মূলত ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হওয়ার পর হাসিনা ও তার বোন সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান। পরে ক্ষুব্ধ জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য, ছবি এবং ম্যুরাল ভাঙচুর করে।

গত জুলাইয়ের শুরুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভে তৎকালীন সরকার ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করলে সহিংসতা সৃষ্টি হয় এবং এতে চার শতাধিক মানুষ নিহত এবং আরো হাজার হাজার মানুষ আহত হন। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে এই প্রতিবাদণ্ডবিক্ষোভ শুরু করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘নিজের কৃতকর্মের ফল নিজের দিকেই ফিরে আসে’। তার মতে, শেখ মুজিব পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছিলেন। ইসলামাবাদে ন্যাশনাল ইয়ুথ কনভেনশনে দেয়া এই বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান হাজার হাজার জীবন উৎসর্গ করেছে এবং ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান নয়, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাকিস্তানের ভূমিকায় সারা বিশ্ব উপকৃত হয়েছে। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ইয়ুথ কনভেনশনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাশাপাশি সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, উচ্চ শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, সারাদেশের শিক্ষক, উপাচার্য এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারসহ ৬টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ লাখ পরিবার। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।

অভিযোগ উঠেছে, ভারতীয় বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ভারতের দাবি, বাঁধের পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ত্রিপুরার গোমতী নদীতে ভারতীয় বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখেছি। তবে বাস্তবে এটি সঠিক নয়।

এতে আরো বলা হয়, আমরা উল্লেখ করতে চাই- ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে এই বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে ঘটেছে।

বন্যাদুর্গত বাংলাদেশিদের নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার এ কেমন হাস্যরস!

ডাম্বুর বাঁধটি সীমান্ত থেকে বেশ দূরে- বাংলাদেশের ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি উজানে অবস্থিত। এটি স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে একটি গ্রিডে পাঠায় এবং সেখান থেকে বাংলাদেশও ত্রিপুরা থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি গ্রহণ করে। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীপথে অমরপুর, সোনামুড়া ও সোনামুড়া ২-এ তিনটি স্থানে আমাদের পানিরস্তর পর্যবেক্ষণ সাইট রয়েছে। সমগ্র ত্রিপুরা ও এর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ২১ আগস্ট থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ভারী প্রবাহের এই ঘটনায়, পানির স্বয়ংক্রিয় মুক্তকরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপাক্ষিক প্রটোকলের অংশ যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য প্রেরণ করছি। গত বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশে সরবরাহকৃত তথ্যে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায়, বন্যার কারণে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটার ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়। তবুও, আমরা জরুরিভিত্তিতে তথ্য পাঠানোর জন্য তৈরি অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীতে বন্যা একটি যৌথ সমস্যা যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানের জন্য ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি-বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগসমূহের সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত