ভারি বর্ষণে বেহাল দশা চট্টগ্রামের
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
কয়েকদিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রামের অধিকাংশ নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু সমান পানি আাবার কোথাওবা কোমড় সমান। জনজীবনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চকবাজার, শুলকবহর, বাদুড়তলা, মুরাদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কে পানি জমে জনভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। নগরের অনেক প্রধান সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন।
গত সপ্তাহখানেক ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে চট্টগ্রামে। বৃষ্টির পানিতে নগরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তায় পানি জমে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। এদিকে, বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে গণপরিবহনের সংখ্যা কম। সেই সুযোগে থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
আবহাওয়া অফিসের সূত্রমতে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আরো ২৪ ঘণ্টা। সেইসঙ্গে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস বা পাহাড়ধসেরও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা। এদিকে, গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এতে নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে পানি নেমে গেলেও পরদিন শনিবার ভারি বর্ষণে আবারও তলিয়ে যায়। এই বৃষ্টি ঝরে রোববারেও। তবে দ্বিতীয় দিনের তুলনায় তৃতীয় দিন জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা কম ছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি চলে আরো দুদিন। কিন্তু বুধবারের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আরো প্রকট হয়েছে। একইসাথে নগরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমড় সমান পানি জমে যায়। আজকের বৃষ্টিতেও সৃষ্টি হয়েছে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার ৯টা পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৪২ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল বারেক জানান, আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে নগরের আশপাশে ভূমিধসেরও সম্ভাবনা আছে। তবে আজকে সন্ধ্যার পরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। মানে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তিনি আরো বলেন, সমুদ্র বন্দরে দেওয়া তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বুধবার নামিয়ে ফেলা হলেও সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই মুহূর্তে সাগরে ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সাগরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। ডুবে গেছে শহরের সড়ক, অলি-গলি ও দোকানপাটও। টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, রুবি গেট, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়ক। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, মসজিদ, বিপণিবিতান, দোকানপাট ডুবে গেছে পানিতে। অন্যদিকে, বুধবার বৃষ্টিতে চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকার সিরাজদ্দৌলাহ সড়ক, কেবি আমান এলাকার সড়কে কোমর সমান পানি ছিল। সড়কের দু’পাশের দোকানপাটে পানি জমে রয়েছে। আজও বৃষ্টিতে একই অবস্থা এ এলাকার। জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। তবে কিছু দোকান খুললেও তাতে বেচাবিক্রির চেয়ে পানি পরিষ্কারের বেশি ব্যস্ত ছিলেন দোকানি ও কর্মচারীরা। এমনকি সড়কে রিকশা ছাড়া অন্য কিছু চলাচল করতে দেখা যায়নি। নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার বাসিন্দা মো. জানে আলম জানান, ব্যবসায়িক কাজে বের হয়েছি। কিন্তু মুরাদপুর এলাকায় এসে মনে হচ্ছে সমুদ্র হয়ে গেছে। মুরাদপুর মেইন রোডে কোমরসমান পানি। কালকেও এমন ছিল। বৃষ্টি সহসা বন্ধ না হলে এমন দুর্ভোগ থেকে নিস্তার নেই। শাহাদাৎ হোসেন নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। চকবাজার ডিসি রোড এলাকায় তার বাসা। তিনি জানান, গতকালের (বুধবার) বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকেছে। পানি পরিষ্কার করতে করতে বেলা শেষ। কাজে যেতেও অসুবিধা হয়েছে। আজকেও আবার জলাবদ্ধতার পানি ভোগাচ্ছে। মেয়র আসে মেয়র যায় কিন্তু আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। তিনি অবিলম্বে এ সমস্যার কার্যকর সমাধানের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে। গত ৭ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। চলতি বছরের জুনে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদকাল বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে কাজ শেষ হতে সময় লাগছে বলে সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প শেষ হতে কত সময় লাগবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।