ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাত মাসে ১১৭ সংখ্যালঘ হত্যার শিকার হিন্দু মহাজোট

সাত মাসে ১১৭ সংখ্যালঘ হত্যার শিকার হিন্দু মহাজোট

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১১৭ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সময় জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মাত্র ৭ মাসেই শেখ হাসিনার দুঃশাসনে ১১৭ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। গত ১৫ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, যশোরের অভয়নগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ফটিকছড়ি, খুলনার শিয়ালী, রংপুরের পীরগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চৌমুহনী, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। শত শত মঠ মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করা হয়েছে। কিন্তু সেসব ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার সরকার করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ভিকটিম বানিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত শোষিত মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে ৩৩ শতাংশ হিন্দু এদেশে ছিল। যা আজ মাত্র ৭.৯৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নিজ স্বার্থে হিন্দু সমাজকে ভিকটিম বানিয়ে হাজার হাজার হিন্দু বাড়ি-ঘর মঠ-মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে ভীতির সঞ্চার করে হাজার হাজার হিন্দুকে পরিকল্পিতভাবে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দুটি দাবি জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সেগুলো হলো- সংখ্যালঘুদের জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা। এ বিষয়ে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এ দুই দাবি বাস্তবায়িত হলে কোনো দলই আর হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক হাতিয়ারা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। নির্বাচন বা সরকারের পালাবদলে হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতিত হবে না। কেউ আর হিন্দু সম্প্রদায়কে ভিকটিম বানিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না। এ সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয় বলেও হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পাশাপাশি তারা জানান, গত ৬ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৩২টি সাধারাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও প্রায় এক হাজার পরিবার নীরব চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শত্রুতা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ৪৩টি মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। অবিলম্বে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তারা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির সরকারি খরচে নির্মাণের দাবি জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার পাল, সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মণ্ডল, যুগ্ম মহাসচিব নকুল কুমার মণ্ডল, সুমন কুমার শীলসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত