টানা ভারি বর্ষণের একদিন পর আবারো ভারি বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি হয়েছে ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। শুধুমাত্র সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি ঝরেছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দিনের প্রথম জোয়ার। সবমিলিয়ে ডুবেছে নগরীর প্রায় এলাকাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কও। সকালে মুরাদপুর আবারো ডুবেছে একবুক সমান পানিতে। তবে নগরীর অন্যান্য স্থানের কোথাও কোমর সমান পানিতে; কোথাও তারও কম পানিতে ডুবেছে। পানির স্থায়ীত্ব ছিল কম। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে নগরীর প্রায় এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১৬ অগাস্ট থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। এ সময় জোয়ারের পানি বাড়তে থাকায় নগরীর প্রায় এলাকা ডুবে যায়। বিশেষ করে বাসা বাড়ি ও দোকানমার্কেটের নিচতলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি ছিল মুরাদপুর এবং বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের মুখের অংশে। সেখানকার স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা তলিয়েছে পানিতে। এ ছাড়া বাদুরতলা, কাপাসগোলা সড়কে হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। সকাল থেকে নগরীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সকালে অফিস আদালতসহ অন্যান্য কর্মস্থলমুখী লোকজনের দুর্ভোগ হয়েছে। জলাবদ্ধতায় শহরের প্রধান বা মূল সড়কগুলোতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলে পৌঁছান। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বৃষ্টিপাত আরো অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি ঝরেছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। পাশাপাশি পাহাড়ধসের সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২৬টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে বাস করে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। ২৬ পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি সংস্থার ও ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চকবাজার কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দির সড়ক এবং বাদুরতলা এলাকায় পানি জমে আছে। ঐ এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রায় এলাকায় নিচ তলায় বাসা বাড়িতে এবং দোকানপাটে পানি ঢুকে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সকাল সকাল বাসা বাড়ির নিচ তলায় পানি উঠায় অনেকে সকালের চা খাবারও খেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। কয়েকজন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ একতলা বাসায় পানি ঢুকে সব আসবাবপত্র ডুবে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং প্রায় এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, মুরাদপুর এলাকা একবুক সমান পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়াও শুলকবহর, বাদুরতলা কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বড় গ্যারেজ, ডিসি রোড, ফুলতলা, খলিফাপট্টি, কে বি আমান আলী রোড, মেহেদীবাগ, চকবাজার, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, ওয়াসা রেবতী মোহন সড়ক, প্রবর্তক মোড়, তিন পোলের মাথা, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, আগ্রাবাদ রঙ্গীপাড়া, বেপারী পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর কুসুমবাগ, হালিশহর ওয়াপদাসহ সন্নিহিত এলাকায় হাঁটু থেকে তারও বেশি পানি উঠেছে। হালিশহর এলাকার বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন বলেন, সকাল থেকে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যুক্ত হওয়ায় পুরো এলাকা এক বুক পানিতে ডুবে যায়। আমাদের এলাকায় নিচতলার বাসা, বাড়ি, দোকান ও মাকের্ট সব ডুবে গেছে। ১১টার পর থেকে পানি নামতে শুরু করে। চকবাজার এলাকার স্থানীয় দোকানদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে আমাদের চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ কোমর সামন পানিতে ডুবে গেছে। বেলা বাড়তে বাড়তে অবশ্য পানি কমে গেছে। নিচু এলাকার সব বাসা বাড়ি দোকান কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। তবে পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আড়াই তিন ঘণ্টার মধ্যে নেমে গেছে। এই এলাকার নিচতলার প্রায় দোকান অর্ধেক ডুবে গেছে। সকাল থেকে রাস্তায় পানি। গাড়ি চলছে না। এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রিকশা ও ভ্যানগাড়িতে যাতায়াতে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। এ সময় দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা।