সংকটের ৭ বছর
স্বদেশে দ্রুত ফিরতে চান রোহিঙ্গারা
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও উখিয়া প্রতিনিধি
রোহিঙ্গা সংকটের ৭ বছরেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। যেখানে এখনো চলছে গণহত্যা। এসব নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয়রত রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গারা বলেছেন, জন্মগত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিক আমরা, গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এটা রিফিউজি জীবন। এমন জীবন চাই না, স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত ফিরতে চাই। কিন্তু যেখানে এখনো রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চলছে। তাই স্বদেশে ফেরত অনেকটা অনিশ্চিত ও অনিরাপদ। তাই আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে অব্যাহত চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন তারা। রোহিঙ্গা সংকটের ছয় বছরে এসে গতকাল রোববার উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পে ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের এমন দাবি জানিয়েছেন তারা। সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে আয়োজন করা হয় সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের। ২৫ আগস্টকে গণহত্যা দিবস মন্তব্য করে ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি গণহত্যার বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান ছিল এসব আয়োজনে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারি রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই ছিলেন সাদা পোশাক পরিহিত। যেসব পোশাকে ছিল নানা দাবিসহ স্লোগান। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩-১৪টি স্থানে পৃথকভাবে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন সমাবেশ। সবচেয়ে বেশি বড় জমায়েত হয়েছে উখিয়ার কুতুপালংস্থ ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঠে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই সমাবেশ ঘিরে লাখের বেশি রোহিঙ্গা নর-নারীর অংশগ্রহণ দেখা গেছে। যেখানে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। যে মোনাজাতে মিয়ানমারের ২০১৭ সালের নির্যাতন নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ বর্ণনা করে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন অংশ গ্রহণকারীরা। নিহতের জন্য দোয়া কামনা করে মিয়ানমারে বর্তমানে চলমান নির্যাতন বন্ধে সৃষ্টিকর্তার সহায়তা চান এবং বিশ্ববাসীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। বাংলাদেশে আশ্রয় ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কতৃজ্ঞ প্রকাশ করেন। সমাবেশে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে গান পরিবেশন ছাড়া নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা বলেছেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আরাকানে জাতিগত নিধন চালিয়ে গেছে। ২০১৭ সালের পর এ বছর আরাকানে রোহিঙ্গা জাতি দ্বিতীয় গণহত্যার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে রাখাইন স্টেটে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর দ্বিতীয় দফা গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা জানায়, দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য এই গণহত্যা দিবসটি পালন করছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা রেখে অনেকেই বলেন, এই দিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এই দেশে আর কত বছর থাকবো? আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই। মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন সফল করতে দেশটির পাশে থাকতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন, মাস্টার রশিদ আহমদ, মাস্টার রহমত উল্লাহ প্রমুখ। সমাবেশে বক্তৃতায় ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের জান্তা সরকরের পর এবার ২০২৪ সালে এসে সেদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ‘জেনোসাইড’ করছে আরকান আর্মি। আরকানের জমিতে আরকান আর্মি মে মাসে বুথেডংয়ে ২ হাজারের উপর মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়া আগস্ট মাসে বোমা হামলায় বহু মানুষ মেরে ফেলেছে। যার কারণে এখনো টেকনাফের নাফনদীতে রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ ভাসছে। বর্তমান যুগে ছাত্রদের হাত ধরে দেশ বদলে যাচ্ছে। আমাদের ছাত্রদের আরকান আজাদী করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাত বছর পার হয়ে গেছে, কোন সমাধান হয়নি। আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, আমরা সেফজোন ফেলে ফিরে যাব, নিজ দেশে।’ ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গারা দ্রুত কর্মসূচি শেষ করেছে। কর্মসূচিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্তি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসু-দৌজা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ‘জেনোসাইড ডে’ পালন করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। সেখানে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।’ এছাড়া ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১২, ১৩, ৮, ১৮, ১৯, নম্বরসহ ১৩ স্থানে একই ধরনের সমাবেশ হয়েছে।