বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে করলা চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে পুরো গ্রামজুড়ে করলার মাচা। সবুজ পাতায় ঘেরা এই মাচার নিচে ঝুলছে করলা। কৃষকরা মাচা থেকে করলা সংগ্রহ করছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই গ্রামের করলা পাইকারদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে সারা দেশে। গ্রামটির করলা সারা দেশে বেশ চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে উপজেলায় প্রায় কোটি টাকার শীতকালীন আগাম সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সবজি উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতা পেয়েছে বলে মনে করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি মোরেলগঞ্জে গড়ে উঠেছে সবজির বাজার। সারা বছরই মোরেলগঞ্জে সবজির আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয় শীতকালে। নিরাপদ ও বালাইমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানিও করা হয়। বিশেষ করে নিজেদের কষ্টার্জিত সবজি বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়ায় প্রতি বছর শাকসবজির আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে আগাম জাতের শাকসবজি আবাদ করে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়ায় সবজির উৎপাদন ভালো হওয়ায় ও বাজার দর ভালো পেয়ে লাভবান হয়েছে তারা।
শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন সিড কোম্পানির করল্লা, লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মরিচ, লালশাক, মুলা শাক, পালং শাক, শাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। তাই মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ৫০ শত ৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিম ৪৫০ হেক্টর, টমেটো ৪২০ হেক্টর, ৬৬০ হেক্টর বেগুন, ৪৬০ হেক্টর ফুলকপি, ২৬০ হেক্টর আলু, ২৬৫ হেক্টর সরিষা। মোরেলগঞ্জের এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সরাসরি ঢাকার কাওরান বাজারে যায়। এছাড়া ইতালি, ইংল্যান্ড, কোরিয়ায় এখানের সবজি রপ্তানি করা হয়। এবার প্রায় কোটি টাকার শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদন করা হয়েছে মোরেলগঞ্জে। শীতে নানা জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে স্থানীয় কৃষকরা। ১৩নং নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সবজি চাষি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে করলা ফুলকপি, ওলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, বেগুন, লালশাক ইত্যাদি। এ বছর দামও ভালো পাচ্ছি। মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সিড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরিব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর মোরেলগঞ্জে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের সবজিতে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা।