রমেক হাসপাতাল
৩০ বছর ধরে বাক্সবন্দি ‘নতুন’ যন্ত্র
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের কেন্দ্রীয় স্টোর রুমে ৩০ বছর ধরে বাক্সবন্দি ‘নতুন’ একটি যন্ত্র। এরই মধ্যে বাক্সে ঘুণ ধরেছে। রেজিস্ট্রারে উল্লেখ না থাকায় এটি কী যন্ত্র, কোন চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এবং কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়েছে, তা কেউ বলতে পারছেন না। রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় জেলখানার বিপরীতে ১৯৬৮ সালে ৬৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় রমেক হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার জনবল কাঠামো নিয়ে ২০১০ সালে হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। রমেক হাসপাতালে সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি, ওষুধসহ যে কোনো নতুন উপকরণ প্রথমে কেন্দ্রীয় স্টোর রুমে তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়। পরে হাসপাতালের নির্দিষ্ট স্থানে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়। প্রয়োজনে বিভিন্ন সোর্স থেকে বিভিন্ন উপকরণ এলেও মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ উপকরণ আসে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে। কিন্তু উল্লিখিত যন্ত্রটির তালিকা দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। কেন্দ্রীয় স্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইয়াসিন জানান, তিনি ৩৪ বছর ধরে চাকরি করছেন। ৩০ বছর বাক্সভর্তি যন্ত্রটি দেখছেন। কিন্তু যন্ত্রটি কিসের, তিনি তা জানেন না। স্টোরে বিভিন্ন উপকরণ বিভিন্ন জনের অধীনে রাখা হয়। তাই যন্ত্রপাতির দেখাশোনার দায়িত্ব হচ্ছে ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ারটেকারের। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যন্ত্রটি আনার পর এখন পর্যন্ত একজন ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার মারা গেছেন এবং দুজন অবসর নিয়েছেন। বর্তমান ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার (আইসিটি) মো. নাহিদ জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এই পদে আছেন। মূলত তার পদ হচ্ছে অফিস সহকারী। রেজিস্ট্রারে উল্লেখ না থাকায় বাক্সবন্দি যন্ত্র সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তবে এটি তালিকাভুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার প্রক্রিয়া চলছে। রমেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার (এসএসও) ডা. সরকার মনিরুজ্জামান রিংকু জানান, দুই বছর ধরে তিনি কেন্দ্রীয় স্টোরের দায়িত্ব পেয়েছেন। রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ না থাকায় তিনি বাক্সভর্তি যন্ত্রটি সম্পর্কে কিছু জানেন না। তবে পুরনো কর্মচারীদের কথা থেকে অনুমান করা যায়, স্টোরে থাকা যন্ত্রটি ৩০ বছরের বেশি সময় থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তার ধারণা, যন্ত্রটি নতুনই আনা হয়েছে। কারণ, হাসপাতালে নতুন কোনো যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ এলে প্রথমে স্টোরে রাখা হয়। তারপর চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় বিভাগকে সরবরাহ করা হয়। স্টোরে আনা এবং সরবরাহ করার কাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত বাক্সবন্দি যন্ত্রটি ওই সময়ে কেন তালিকাভুক্ত করা হয়নি, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। উদাহরণস্বরূপ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) থেকে সম্প্রতি রমেক হাসপাতালে কয়েকটি বিভাগের জন্য ল্যাপারোস্কোপিক যন্ত্র পাঠানো হয়। কিন্তু গাইনি বিভাগের জন্য দেয়া ল্যাপারোস্কোপিক যন্ত্রে ভুল করে ক্যামেরা দেয়া হয়নি। ক্যামেরার দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। অবশ্য পরে ক্যামেরা সরবরাহ করেছে। কিন্তু যদি বিষয়টি তখন ধরা না পড়ত, তাহলে স্টোর কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানো কঠিন হতো।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর বিভাগ ও জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, ‘শুধু স্টোর নয়, রমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আনা হলেও নানা কারণে তা প্যাকেট থেকে বের করা হয়নি।’ তাই তিনি তদন্ত করে এর সঙ্গে রমেক হাসপাতাল, স্বাস্থ্যের ডিজি এবং মন্ত্রণালয়ের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে রংপুরের সচেতন মানুষের দাবি, যোগ্য ব্যক্তিকে উপপরিচালক পদে দেয়া হলে রমেক হাসপাতালে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে। গত ১০ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস রমেক হাসপাতালে পরিদর্শনে এলে সেনাবাহিনী থেকে পরিচালক পদে লোক বসানোর দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে রমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) মো. মেজবাউল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।