অন্যরকম
নিজেই নিজের চিকিৎসা করল ওরাং ওটাং
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার একটি সুমাত্রান ওরাং ওটাং ওষুধি গাছ ব্যবহার করে নিজের ক্ষতস্থান নিজে সারিয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশাল এ প্রাণীটির গালের অংশে একটি ক্ষতের তৈরি হয়। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো উদ্ভিদ ব্যবহার করে বন্যপ্রাণী নিজেকে সারিয়ে তোলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। রাকুস নামের এই ওরাং ওটাংটি ওষুধি গাছের পেস্ট নিজের মুখমণ্ডলে ব্যবহার করে। এরপর এক মাসের মধ্যে সেই ক্ষতটি সেরে যায়। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মানুষ এবং বনমানুষ একই পূর্বপুরুষ থেকে আসার যে ধারণা করা হয়, সেটি থেকে প্রাণীটির মধ্যে এই আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে বলে ধারণা তাদের। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যানক ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ডক্টর ইসাবেল্লা লমার বলেছেন, ‘তারা আমাদের নিকটাত্মীয় এবং তাদের সঙ্গে যে আমাদের মিল রয়েছে সেটি আবারো নির্দেশ করেছে এই বিষয়টি। আমাদের মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে বেশি মিল রয়েছে।’ ২০২২ সালের জুনে রাকুসকে ইন্দোনেশিয়ার নশাল জাতীয় পার্কে দেখতে পান একদল গবেষক। ওই সময় এটির গালে তারা ক্ষতটি দেখতে পেয়েছিলেন। ওরাং ওটাংটির গালে গভীর ক্ষত দেখা গিয়েছিল। গবেষকদের ধারণা, অপর একটি পুরুষ ওরাং ওটাংয়ের সঙ্গে এটি মারামারিতে জড়িয়েছিল। কারণ এই ওরাং ওটাংয়ের গালে ক্ষতচিহ্ন দেখার কয়েকদিন আগে তারা এটির চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন। এরপর গবেষকরা দেখতে পান রাকুস নামের এই ওরাং ওটাংটি ‘আকার কুনিং’ নামের একটি প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উদ্ভিদ চাবাচ্ছে। এই ওষুধি গাছটি স্থানীয়ভাবে ম্যালেরিয়া এবং ডায়বেটিস চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। প্রাণীটি ওই উদ্ভিদের রস টানা সাত মিনিট বেশ কয়েকবার প্রয়োগ করে। এরপর চাবানো উদ্ভিদটি সে পুরো ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়। এরপরই আসল ম্যাজিক দেখতে পান গবেষকরা। তারা লক্ষ্য করেন ক্ষতটিতে কোনো সংক্রমণ হয়নি এবং পাঁচ দিনের মাথায় এটি প্রায় সেরে গেছে। এক মাসের মধ্যে ক্ষতটি পুরোপুরি ভ্যানিশ হয়ে যায়। গবেষকরা বলেছেন, প্রাণীটি জেনে বুঝেই এই কাজটি করেছে। কারণ এই গোত্রের প্রাণীরা এই উদ্ভিত খায় না। প্রাণীটি কিভাবে উদ্ভিদটিকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রক্রিয়া জানল সেটির দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, হয়তো ওই ওষুধি গাছটি ধরার পর ওরাং ওটাংটি তার গালে হাত দেয় এবং বুঝতে পারে যে, এটি তার যন্ত্রণা কমিয়ে দিয়েছে। এরপর সে উদ্ভিদটি একাধিকবার প্রয়োগ করে। অথবা সে অন্য কোনো ওরাং ওটাংকে ওষুধ হিসেবে এই উদ্ভিদটি ব্যবহার করতে দেখেছে। রাকুসের মতো অন্যান্য ওরাং ওটাংও এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে কি না সেটি এখন নজরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।