সুসংবাদ প্রতিদিন
ঘেরের বেড়িবাঁধে চার স্তরের সবজি চাষে স্বাবলম্বী চাষিরা
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এসএম সাইফুল ইসলাম কবির, মোরেলগঞ্জ
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলার মৎস্য ঘেরের ভেড়িবাঁধে পতিত জমিতে চার স্তরের নিরাপদ সবজি চাষ করে কয়েক হাজার চাষি এখন অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের উৎপাদিত ১০০ ট্রাক সবজি এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে বইছে শান্তির সুবাতাশ। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করায় এটি সম্ভব হয়েছে। চাষিরাও তাদের এ অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯টি উপজেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মংলা, রামপাল, বাগহাট ও কচুয়ায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ আবাদ হয়েছে। ৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিজ জমিতে আখ চাষ করে চাষিরা আশানুরূপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাল জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে সবজি কাটতে। সারি সারি ভ্যান দাড়িয়ে আছে এ সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থেকে সবজি স্থানীয় বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে নিয়ে যায়।
বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯টি উপজেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মোংলা, রামপাল, বাগহাট ও কচুয়ায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ আবাদ হয়েছে। ৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিজ জমিতে সবজি চাষ করে চাষিরা আশানুরূপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাল জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শত শত চাষিদের তাদের পতিত জমি ফেলে না রাখার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। শুধু তাই নয়, তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন সেজন্য তাদের হাতে-কলমে সবজি চাষের উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। যারই অংশ হিসাবে তারা এ অঞ্চলের শত শত চাষিকে স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি)-এর মাধ্যমে ঘেরের ভেড়িবাঁধে পতিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন। সেই পরামর্শ নিয়ে তারা সবজি চাষের উপর মনোযোগী হন। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়িবাঁধে মোট ৫৫শ’ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হয়েছে। ১৩নং নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের জাহিদুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন সুমনসহ একাধিক চাষি জানান, তারা তাদের ঘেরের ভেড়িবাঁধে চার স্তরের সবজি চাষ করেছেন। একই ঘেরের ভেড়িবাঁধের উপর যে চার প্রকার সবজি চাষ করা যায় তা তারা কোনো দিন কল্পনাও করতে পারেননি। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে তারা এ পদ্ধতিতে চাষ করা শিখেছেন। তারা বলেন, ঘেরের ভিতরে মাছ আর ডাঙ্গায় অর্থাৎ ঘেরের ভেড়িতে বরবটি সিম, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, চাল কুমড়া ও লাউ এবং দুই গাছের মাঝখানে বেগুন মরিচ টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের শত শত ঘেরমালিক ও বিভিন্ন ব্যক্তি জমি হারি বা বরগা নিয়ে সবজির চাষ করেছেন। বাম্পার ফলনও হয়েছে। নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের গ্রামের বিলে হাজার হাজার একর জমিতে মনোমুগ্ধকর সবজির চাষ করা হয়েছে। যা দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায় এ যেন ভিন্ন এক অঞ্চল। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর হতে দুপুর পর্যন্ত শত শত কৃষক তাদের ঘেরের পাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সবজি তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই সবজি বস্তায় ভরে ভ্যানযোগে কুরোলতলার মোড় বা বাজারে নিয়ে আসছেন। সেখানে কয়েকজন ক্রেতা তা ক্রয় করে বড় বড় তুম্বু করে তা বস্থায় ভরে ট্রাক বা পিকাপে করে ঢাকা চট্টগ্রাম রাহশাহী ও খুলনার বিভিন্ন বড় বড় বাজরে নিয়ে যাচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এ সমস্ত কার্যক্রম দেখে মন আরো মুগ্ধ হয়ে ওঠে। এ যেন এক সবজির স্বর্গরাজ্য। সবজি ব্যবসায়ী আল আমীন শেখ, রবিউল ইসলামসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তাদের এই মোড় হতে প্রতিদিন ২৮-৩০টি ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রকার সবজি ঢাকা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সবজির মোটামুটি মূল্য এখানে একটু কম হলেও চাষিরা খুশি। কারণ তারা ঘেরের পাড়ে বসেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিনসহ একাধিক চাষি বলেন, মাত্র দেড় দুই মাসে তারা ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকার সবজি বিক্রয় করেছেন। শুধু সবজিই নয়, নিচেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এবং অন্য মৌসুমে ঘেরের ভিতর ধানের চাষও করেন তারা। শুধু বেতাগা ইউনিয়নই নয়, মানসা-বাহিরদিয়া, শুভদিয়া, নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ ও লখপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডের ঘেরের পাড়ে সবজির চাষ হয়েছে বিপুল পারিমানে। এ উপজেলায় প্রায় ৫শত হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ হয়েছে। প্রতিদিন এই উপজেলা হতে প্রায় ২৫ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। সবজি চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় শত শত কৃষকের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি তারা অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে সম্মৃদ্ধ হতে সক্ষম হয়েছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৫৫শ’ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। যে কারণে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সব পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় চাষিদের প্রতি আহ্বান জানান।