হিংসা-বিভক্তির রাজনীতির অবসান চায় জামায়াত

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশ থেকে হিংসা-বিভক্তির রাজনীতির অবসান চায় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমের সম্পাদক-সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই কথা জানান। জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা হিংসার রাজনীতির কবর চাই। এটা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। আমরা বিভক্তির রাজনীতির কবর চাই, এটাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক, কোনো বিষয়ে আমরা জাতির বিভক্তি চাই না। সকল ক্ষেত্রে আমরা চাই, জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক। আপনাদের দোয়া চাই, পরামর্শ চাই, সমালোচনা চাই, ভালোবাসা চাই, সাহায্য চাই।

গুলশানের হোটেল লেকসোরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে বসলেন।

এই মতবিনিময় সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিক, মানবজমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার পরিচালক (বার্তা) হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে-একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু মুক্ত গণমাধ্যমের বিষয়ে বক্তব্য দেন। গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে আমির বলেন, সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীন বিবেকের জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন সেই পরিবেশটা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আমাদের কাছে আপনারা চেয়েছেন। আমি দলের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ আপনারা এটা রেকর্ডে রাখবেন। শফিকুর রহমান বলেন, কখনো যদি আমাদের হাতে এই সুযোগ আসে যে প্রতিশ্রুতি আপনারা আশা করেছেন, সেটা আপনারা পাবেন ইনশাআল্লাহ। এখান থেকে আমরা নড়ব না, আমাদের পক্ষে যাক বিপক্ষে যাক, আমরা সত্যের পক্ষে আপনাদের সাথে থাকব। জামায়াত আমির বলেন, আপনাদের সাক্ষী রেখে বলছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে কারো প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। শফিকুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট ক্রাইম করেছেন, যিনি পারপিটেট, তার ওই নির্দিষ্ট ক্রাইমের শাস্তি যেটা আপনার সাথে হোক, আমার সাথে হোক, যার সাথেই হোক থাকবে না। এই বিচার যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে সমাজে কোনো সংশোধন হবে না। তখন মানুষ আন কনট্রোল, বিঅনড কনট্রোল, উইথআউট ওন স্পিরিট কনট্রোল তা অন্য রকম হয়ে যাবে, বেপোরোয়া হয়ে যাবে। এজন্য এটা ন্যায্যতা দাবি, ন্যায় বিচারের দাবি, সভ্যতার দাবি, সামাজিকতার দাবি, শান্তির দাবি। জামায়াত আমির বলেন, ‘সেই ক্ষেত্রে ভিকটিমরা যদি সঙ্গত উদ্যোগ নেয়, সেই উদ্যোগে সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাংবাদিক সকলের সাপোর্ট করা দরকার। কিন্তু তা অসঙ্গত কিছু হলে আমরা তার সাথে নেই। সম্প্রতি দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণহারে একটা হত্যা মামলায় শত শত আসামি করা হয়। এটা কতটুকু যৌক্তিক, এটা শতবার চিন্তা করা উচিত। তবে এর আড়ালে কিন্তু মূল ব্যক্তিটির বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা বলেছি, আমরা সবার চাইতে মজলুম বেশি, অত মামলার প্রয়োজন নেই। সিম্বলিক কিছু মামলাই মানুষের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট।

আমির বলেন, ‘কিন্তু সেই মামলায় একজনও নিরপরাধ মানুষ যাতে আমাদের মামলায় অভিযুক্ত না হয়, সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। ১০ জন ঠিক আছে, একজন বেঠিক। এই একজনের ওপরে যদি জুলুম হয় আমরা জুলুম করতে চাই না। তারপরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো ভুল হয়ে যায়, আপনাদের কাছে ধরা পড়ে আমাদের বলে দেবেন, আমরা সংশোধিত হবো, কথা দিচ্ছি। শফিকুর রহমান বলেন, এই দেশটা আমাদের সবার। এদেশের মতো মত-পথ-দল-ধর্ম-বর্ণ-পেশা, সবাইকে নিয়ে দেশটা আমাদের। আসুন আমরা দেশের মানুষ হই। আমার খুব ব্যথা লাগে যখন একদল বলে পাকিস্তানি রাজাকার, আরেক দল বলে হিন্দুস্তানি রাজাকার, খুব কষ্ট লাগে। আমার দেশের জনগণকে আরেক দেশের দালাল বানাচ্ছি, রাজাকার বানাচ্ছি, কেন এটা করছি? জামায়াত আমির বলেন, এটা যারা করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া উচিত। যে জাতি নিজের নাগরিকের স্বীকৃতিই দেয় না, সেই জাতি বিশ্বের দরবারে সম্মানটা পাবে কীভাবে? আপনাদের মতো আমারও কিছু কিছু দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেই দেশের লোকেরা তাদের ভাষার বাইরে কারো সাথে কথা বলতে চায় না। ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ দুই একটা আছে, সেটা তারা জানে, কিন্তু বলে না। তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা এতটাই দৃঢ়। আমরা দেখি যে, জাতীয় জীবনে কোনো মুহূর্ত এলে তারা এক হয়ে যায়।

মতবিনিময় সভায় জামায়াতের আমিরের সঙ্গে দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আখন্দ উপস্থিত ছিলেন।