ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর) গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ ভেঙে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা। গতকাল দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় আয়নাঘরে গুম করে রাখা ব্যক্তিদের ফেরত দিতেও জোর দাবি জানান স্বজনরা। এ সময় তাদের হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি সম্বলিত বিভিন্ন কার্ড ফেস্টুন দেখা যায়। এর আগে আয়নাঘরে বন্দি সবাইকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে একটি কমিশন গঠন করে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, হেফাজতের আন্দোলনের কর্মসূচিতে হত্যাকাণ্ড ও ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের তালিকা করা, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানোরও দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। সেখানে তারা নিজেরা ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকার সময়ের কথা বর্ণনা করেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত ক্যাপ্টেন (অব.) মারুফ জামান বলেন, তিনি দীর্ঘ ১৬ মাস আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি ‘আয়নাঘর’ তৈরি করার পেছনে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ কয়েকজনকে দায়ী করেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক তাকে একাধিকবার গুম করার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এসবের মূল হোতা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। তিনি এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিচারের দাবি জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. হাসান নাসির বলেন, তারা গত রাতে দাবি জানানোর পর দুজন আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অবশিষ্ট যারা আছেন, যে কোনো মূল্যে তাদের মুক্তি দিতে হবে। হাসান নাসির বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশ মডেলের সরকার গঠন করতে হবে। গত ১৬ বছরে যত আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করতে হবে, দেশের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গত ১৬ বছরে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের তালিকা করতে হবে। তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করতে হবে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিনা বিচারে অবসরে পাঠানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদের আন্দোলনের সুফল নষ্ট করতে চক্রান্ত চলছে উল্লেখ করে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, গুম হওয়া ব্যক্তিদের গোপন স্থানে আটকে রাখার বিষয়টি গণমাধ্যমে ‘আয়না ঘর’ হিসেবে পরিচিতি পায়।