সুসংবাদ প্রতিদিন

পতিত জমিতে আউশের বাম্পার ফলন

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

নীলফামারীর ডোমার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) তাদের ৩০০ একর জমিতে উৎপাদন করতো আলু বীজ। অন্যান্য সময় পড়ে থাকতো সম্পূর্ণ জমি। কিন্তু এবার বিএডিসির উদ্যোগে খামারের পতিত জমিতে উৎপাদন হয়েছে আউশ ধানের বীজ। যা থেকে ৪০০ টন ভিত্তি ধান বীজ উৎপাদনের আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই পরিমাণ বীজ দিয়ে আউশ আবাদ করা যাবে ৪০ হাজার একর জমি। এছাড়াও অবীজ ধান পাওয়া যাবে ৬০ থেকে ৭০ টন। যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার উপরে। খামার সূত্রে জানা যায়, ভিত্তি বীজআলু উৎপাদনের জন্য ৬৫০ একর জমিতে বিএডিসির বিশেষায়িত খামার এটি। এই খামারে প্রতি বছর আলু আবাদের পর সীমিত আকারে গম চাষ হতো। এরপর দীর্ঘ একটি সময় এসব জমি পতিত থাকতো। তবে গত দুই বছর ধরে পতিত জমিগুলোতে আউশের ভিত্তি বীজ উৎপাদনে কয়েক জাতের ধানের আবাদ করা হচ্ছে। এতে করে অলস পড়ে থাকা এসব জমির আবাদ একদিকে খরা সহিষ্ণু আউশ ধান বীজের সংকট কাটাচ্ছে অন্যদিকে বোরো আমন মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে কর্মহীন থাকা কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তা ছাড়াও অসময়ে একটি ফসল উৎপাদনে খামারের বাড়তি আয় হচ্ছে। খামারের সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, আগে খামারে জমিতে বছরে দুইটা ফসল হতো। একটি হলো ভিত্তি বীজআলু, অপরটি গম। এখন আউশ বীজ ধান আবাদ শুরু হওয়ায় বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে জমির পাকা ধান কাটা-মাড়াই চলছে। ৩০০ একর জমিতে ফলন ভালো হওয়ায় ৪০০ টন বীজ ধান উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও অবীজ ধান পাওয়া যাবে ৬০ থেকে ৭০ টন। প্রতিটন বীজ ধানের মূল্য ৫০ হাজার টাকা হিসাবে যার বিক্রয় মূল্য দুই কোটি টাকার ওপরে। অসময়ে ধান আবাদে এলাকার দুই থেকে ৩০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা বলেন, আউশ আবাদের পর ওই জমিতে আলু চাষ করলে ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগবালাই কমবে। পাশাপাশি মানসম্মত আউশ বীজের সংকট কাটবে। ২০২০-২১ আউশ ধান উৎপাদন মৌসুমে একেবারে পতিত পড়ে থাকা ১৮৭ একর জমিতে পরবর্তীতে ২০২১ সালে উৎপাদন মৌসুমে ২৪০ একর ও ২০২২ সালে উৎপাদন মৌসুমে (ব্রিধান-৯৮) জাতের ২৫৫ একর জমিতে আউশ ধান বীজ উৎপাদন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। বর্তমানে চলতি আউশ উৎপাদন মৌসুমে ৩০০ একর জমিতে (ব্রি ধান-৯৮) জাতের ধান বীজ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আউশ ধানের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এপ্রিল মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে চারা রোপণের পর থেকে মাত্র ৮০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। অর্থ্যাৎ ধান থেকে ধান উৎপাদনের মোট সময় লাগে ১০৩ থেকে ১০৫ দিন। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে রবি মৌসুমে অন্যতম লাভজনক শস্য ভুট্টা। ভুট্টা চাষের পরে আমন রোপণের পূর্ব পর্যন্ত জমি পতিত পড়ে থাকে। যা আউশ ধান আবাদের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে। এ সময় জমি পতিত না রেখে মাত্র ৮০ দিনের ব্যবধানে আউশ চাষ করে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৭ মণ ধান উৎপাদনের পরে স্বল্প মেয়াদে আমন ধানসহ আলু উৎপাদন সম্ভব। চলতি আউশ মৌসুমের ওই খামারের ৩০০ একর জমির ধান উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে বর্তমানে কম্পাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান বীজ ফসল সংগ্রহ করে দানা শস্য গ্রেডিং মেশিন দ্বারা ধানবীজ গ্রেডিং করে ধান সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র মতে, লাভজনক হলেও প্রতিবছর জেলায় কমছে আউশ ধানের আবাদ। জেলায় চলতি বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে ২০২২ সালে ১ হাজার ৫৯৫ ও ২০২৩ সালে আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে।