এখনো নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সবজি ও মুরগির দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে চরম অস্বস্তিতে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষরা ধারণা করেছিল, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে যাবে। কিন্তু হাতে গোনা দুই-একটি পণ্য ছাড়া অধিকাংশ পণ্যেরই দাম নাগালের বাইরে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। বস্তা প্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। ব্যবসায়ীদের কাছে বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে পাইকার ও আড়তদারদের দুষলেন তারা। একই সঙ্গে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রতিও অভিযোগ করেছেন তারা। একজন চালের পাইকারি বিক্রেতা জানান, আগস্টের শুরুতে চালের দাম বর্তমানের তুলনায় কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা কম ছিল। সরকার পতনের পর চালের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা আসলে ভুল জায়গায় আসছেন। আপনাগো ধরা উচিত মিল মালিকদের। আমরা কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা লাভে চাল বিক্রি করি। দাম ওঠাণ্ডনামার সঙ্গে আমরা জড়িত না।তিনি আরো বলেন, সরকার পতনের পর কোনো সংস্থার লোক দেখি নাই। কেউ যদি মনিটরিং না করে তাহলে মিল মালিকরা তো ইচ্ছা মতো দাম বাড়াবোই।একই তথ্য জানিয়েছেন আরেক চাল বিক্রেতা। তিনি বলেন, বন্যা হইতাছে। ওইদিকে অনেক চাউল গেছে। মিল মালিকরাও সুযোগে আছে। তাদের ধরেন।

এদিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট নামে বিক্রি করা চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৬৮ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ছিল।

বাজারে চাহিদার শীর্ষে থাকা আটাশ চালের কেজি ৬০ টাকা। মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত এই চালটি দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৫৭-৫৮ টাকা।

কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে পাইজাম ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে নাজিরশাইল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এই দাম আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বাজারে সবচেয়ে কম দামে মিলছে হাইব্রিড চাল। কেজি ৫০ টাকা। বিক্রেতাদের মতে, কিছুটা লালচে ধরণের এই চালের খদ্দের একেবারে দরিদ্র পর্যায়ের মানুষ। এছাড়া বাজারে আতব চাল ৫০ টাকা এবং পোলাও এর চাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ডিমের বাজারে দেখা গেছে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ৫ টাকা বেড়ে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। একজন ডিম বিক্রেতা বলেন, ডিমের দাম একটু বেড়েছে। কারণ বন্যা। তবে অন্যান্য সময় এ ধরনের বন্যায় প্রতি ১০ ডজনের ১০-২০ টাকা বাড়ে। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। আসলে এখন বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা আছে।

সব ধরনের মাছের দামও বাজারে ঊধ্বমুখী। যেকোনো মাছ কিনতে ক্রেতাদের বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। তাতেও সাধ্যের মধ্যে আসছে না পছন্দের মাছ। বাজারে মাছের দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে মাছ চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কৈ-সহ সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি যাচ্ছে।

বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৩০-২৫০ টাকায়, চাষের কৈ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৮০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ২৮০-৩৫০ টাকায়, কাতল প্রতি কেজি ৩২০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাপিলা প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪০০-৪৫০ টাকায়, গুলশা টেংরা প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকায়, টেংরা প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায়, পাবদা প্রতি কেজি ৪২০-৪৮০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০-৭০০ টাকায়, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারে সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি যাচ্ছে।

একজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আগে আমরা মাছে ভাতে বাঙালি ছিলাম। এখন আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য মাছ কিনে খাওয়াই কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে মাছের দাম অতিরিক্ত বেশি যাচ্ছে। এই দিকে সরকারের কেউ নজর দিচ্ছে না। এখন আমাদের মতো গরিবদের পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কৈ মাছের দামও বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর ভালোমানের মাছের তো কেনার সক্ষমতা নেই। বাজারে অনেক কিছুর দামই আগের চেয়ে কমেছে শুধু ব্যতিক্রম মাছের বাজার। সেই যে বেড়েছে মাছের দাম, তা আর কমার কোনো নামই নেই।

বাজারে মাছে দাম বাড়তি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে একজন বিক্রেতা বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ অনেকটা কম। এর মূল কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যায় মাছ চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে সবজির বাজারে অনেকটা স্বস্তি রয়েছে। বন্যার মধ্যেও সে অবস্থা বজায় রয়েছে। এখন বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালে। এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পটোল, পেঁপে, ঢ়্যাঁড়স। এক মাস আগেও ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মেলেনি। এ তিন সবজির মতো বেশিরভাগ সবজির দর বেশ কমেছে। আগে বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, করলা, কচুরমুখীর মতো সবজি ১০০ টাকার ওপরে ছিল, এখন ৬০-৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

কিছুটা কমতে দেখা গেছে আলুর দামও। প্রতিকেজি ৬০ টাকা কেজি দরের আলু এখন ৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকার ওপরে ছিল, এখন ১৬০ টাকা দরে নেমেছে। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের মতো ১১০ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, এখন ১৬০-১৭০ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি ১০ টাকা কমে সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। তবে ইলিশের মৌসুমে দাম আরো কম থাকা উচিত বলে মনে করেন ক্রেতারা।