দেশের আর্থনীতির কথা চিন্তা করে দেশে কম গুরুত্ব পূর্ণ প্রকল্পগুলো বাদ দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ‘বিতর্কিত’ বিদ্যুতের (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর অধীনে অনুমোদিত ৪৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১২টি রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। বাকি ৩১টি হচ্ছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৩৬৩০ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, বাতিল হওয়া রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ৯৫২ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র এর মধ্যেই চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। বাকি ৩১টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলো তড়িঘড়ি অনুমোদন করা হয়েছিল এবং বিশেষ পাওয়ার অ্যাক্টের অধীনে ইন্টেন্টের চিঠি মঞ্জুর করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল করা হবে। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বিদ্যুৎ ভবনে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকার বিতর্কিত বিশেষ আইনের অধীনে করা প্রকল্পের সব আলোচনা, প্রকল্প নির্বাচন এবং ক্রয় প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিশেষ আইনের অধীনে হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন না হওয়া এবং বেশি কিছু প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নবায়নযোগ্য ৩১ প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখানেও একই নীতিতে যদি চুক্তি হয়ে গিয়ে থাকে বা অপারেশনে থাকে সেগুলো থাকবে। যেগুলো চুক্তি হয়নি ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ হয়েছে সেগুলো আবার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হবে।
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র যেগুলো বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলোর একাধিকবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তারা প্রচুর লাভ করেছে। এখন বাতিল করলেও তাদের কোনো লস হবে না। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামীতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ আইনের অধীনে প্রকল্প পেতে প্রচুর টাকা ঘুষ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ বিশেষ আইনের অধীনে ১৩৩টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রক্রিয়া করেছে, যার মোট সক্ষমতা ১৩৪৯৪.২২ মেগাওয়াট। এই প্রকল্পগুলোর খুবই অল্প এখন পর্যন্ত সরকারি টাকায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, রেল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এখন থেকে ২০১০ সালের বিশেষ আইনের অধীনে কোনো কাজ করব না এবং ২০১০ সালের আইনের অধীনে যেসব প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে সেগুলোর কাজ করব না। যেগুলো চুক্তি হয়ে গেছে, যেগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, সেগুলো আপাতত অনার করব।
তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি আর নবায়ন করা হবে না। বিচার বিভাগের বিচারপতি দিয়ে একটি কমিটি করা হবে, তারা এই আইনের অধীনে করা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি না তা দেখবে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউঅ্যাবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সঙ্গে এক বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, একই সঙ্গে সোলারের ক্যাপাসিটিকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হবে তবে বেসরকারি খাতকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ পেতে হবে।
এসব প্রকল্প বাতিলের সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, এতদিন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি, কিন্তু আমলে নেয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রকল্পগুলো বাতিলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের অযৌক্তিক বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দ্রুত বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর অধীনে অনুমোদিত সব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করা। তিনি বিদ্যুতের দাম কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করার দাবি জানান।