ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষে সফল মোরেলগঞ্জের কৃষকরা

লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষে সফল মোরেলগঞ্জের কৃষকরা

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ লবণাক্ত জমিতে শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ বা কুমড়া ঝুলে আছে। কাছে গেলে বোঝা যায় গুনো ও লাইলোনের সুতোর জালে তৈরি বিশেষ মাচায় রসালো তরমুজ ঝুলছে। এখন তরমুজের মৌসুম না হওয়ায় দাম পাচ্ছেন ভালো। এ জাতের তরমুজ মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় পাইকাররা খেত থেকেই প্রতি কেজি তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বিভিন্ন রংয়ের তরমুজে দেখলে মন জুড়াবে যে কারও। সরজমিনে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাষানন্দল গ্রামের শাহ জাহানের ছেলে কৃষক রাজিব জাহিদুল ইসলামের ঘেরের ভেড়িতে মাত্র ৪ মাসেই অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাইজোরা গ্রামের তরমুজ চাষি দেলোয়ার হোসেনের নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাষানন্দল গ্রামের খেতে ঘেরের ভেড়িতে অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। অসময়ের এই তরমুজের দামও ভালো হবে, এমন আশা হতদরিদ্র কৃষক দেলোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, নিজের জমিজমা নেই। এক একর জমি বর্গা নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করতাম, এতেই মোটামুটি চলে আমাদের সংসার। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘেরের পাড়ে অফসিজন বা অমৌসুমি তরমুজের চাষ শুরু করি। তরমুজের বিচি, বাস, কাঠ, লাইলোনের সুতোর জাল, গুনা ও শ্রমিক মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তা যে ফল দিয়েছে তাতে ১ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারব। তরমুজ শেষ হলে, এই মাচায়ই কুমড়ো, লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা যাবে। অসময়ে তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষক রাজিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই চাষটি স্বাভাবিক লাউ-কুমরো চাষের মতই, মাটিতে জৈব ও রাসয়নিক সার দিয়ে বিচি রোপণ করতে হয়। পরে গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন পানি দিতে হয়। তেমন খরচ না হলেও, যত্ন করতে হয় অনেক। তবে তরমুজ চাষে আমাদের সবসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ সহযোগিতা করেছেন। এভাবে কয়েক বছর ভালোভাবে চাষ করতে পারল সংসারে সচ্ছলতা আসবে বলে দাবি করেন এই কৃষক। রাজিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি দরে তরমুজ ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করেছে। আশা করি, দুই-চারদিনের মধ্যেই আমরা বিক্রি শুরু করতে পারব। শুধু দেলোয়ার হোসেন নয়, ভালো দাম ও চাষাবাদ সহজ হওয়ায় জেলার অনেকেই অফসিজন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাইজোরা গ্রামের তরমুজ চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ৭০ শতাংশের ঘের রয়েছে। ঘেরের পাড় বা আইল রয়েছে ২০ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ঘেরপাড় আনাবাদি পড়ে থাকত। তখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং কৃষি উপকরণ সহযোগিতা পেয়ে ঘেরপাড়ে তরমুজের চাষ করি। এখনো চাষা অব্যাহত রয়েছে। এ বছরও ঘেরপাড়ে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি হয়েছে। ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। বিগত বছরগুলোতেও তরমুজ চাষ করে ভালো টাকাই উপার্জন করতে পেরেছি।’ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০০ কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন।

আগামী বছরে চাষের জমি ও কৃষক আরো বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের। শাহ জাহান নামের আরেক কৃষক বলেন, ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। যদি সব মাছের ঘেরের পাড় ও উঁচু জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করা যায় তাহলে, কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভববান হতে পারে। মোরেলগঞ্জ নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসুন্নাহার বলেন, আমরা সব সময় মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের ইউনিয়নে অফসিজন তরমুজ চাষিদের সব সময় খোঁজখবর রাখছি।

চাষিদের গাছে কখনও কোনো সমস্যা বা রোগব্যাধি দেখা দিলে, দ্রুত আমরা মাঠে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, অফসিজন তরমুজ চাষিদের সব সময় খোঁজখবর রাখছি। চাষিদের গাছে কখনও কোন সমস্যা বা রোগব্যাধি দেখা দিলে, দ্রুত আমরা মাঠে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অফসিজন তরমুজ চাষিদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এই চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে যার কারণে চাষিরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, আমরা সব সময় কৃষকদের উচ্চমূল্য সম্পন্ন ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান করি।এজন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হয়। এই কারণে জেলায় দিন দিন অমৌসুমি তরমুজ চাষি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫০০ চাষি ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত