দক্ষিণ কোরিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি ঐতিহাসিক জয় লাভ করেছে কয়েকজন শিশু-কিশোর। হান্না কিম, মাত্র আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে জয়লাভ করেছেন। চার বছর ধরে চলা তাদের এ আইনি যুদ্ধে জয়লাভ এশিয়ায় জলবায়ু সম্পর্কিত আইনি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। হান্না, সিউলের সিওংনাম শহরের বাসিন্দা। যে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শুরু করেছিল, তখন থেকেই ‘বেবি ক্লাইমেট লিটিগেশন’ নামে একটি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করছে এ সংগঠনটি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, লড়াইয়ে সফল হওয়ার পর হান্না বলেন, আমি খুব খুশি ছিলাম যখন রায়টি প্রকাশিত হয়েছিল, তখন আমার মা কেঁদেছিলেন। আদালতে সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় তার মা সুজিন নামগুং উল্লেখ করেন, হান্নার হাসি এত চওড়া ছিল যে তার সব দাঁত দেখা যাচ্ছিল।
তবে এই আইনি জয়কে শুধু শুরু বলছেন তারা। হান্না বলেন, সংবিধান আদালত শিশু এবং কিশোরদের কণ্ঠকে শুনেছে। জাতীয় সংসদ এবং সরকারকেও আমাদের কথা শুনতে হবে।
তিনি যোগ করেন, পৃথিবীজুড়ে সবাইকে গ্রীনহাউস গ্যাস কমানোর একটি বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা অনুসরণ করতে হবে। আর আমরা খুব শিগগিরই এটা দেখতে চাই। সরকার যদি তার ওপরে ন্যস্ত প্রতিজ্ঞা পালনে ব্যর্থ হয় তবে আমরা তাদের চিৎকার করে জানিয়ে দেব। এই রায়ের ফলে সরকারকে ২০৩১-৪৯ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সরকার জানিয়েছে, তারা পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করবে।
১২ বছর বয়সি জিয়া হান, সিউলের বাসিন্দা এবং এই মামলার বাদীদের মধ্যে আরেকজন। সে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব অনুভব করেছে। জিয়া জানিয়েছে, টাইফুনের কারণে আমি স্কুলে যেতে পারিনি, আর আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রায়ই আমার প্রিয় শারীরিক শিক্ষার ক্লাসগুলো বাতিল করেছে। ১০ বছর বয়স থেকেই সে জলবায়ু আন্দোলনে জড়িত এবং প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে।
তবে বারবারই তাকে হতাশ হতে হয়েছে। কিন্তু দমে না গিয়ে জিয়া তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। জিয়া বলেন, কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা আরও দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করা উচিত। সংবিধান অনুযায়ী, সব নাগরিকের মর্যাদা এবং সুখের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সরকার আমাদের মৌলিক অধিকারকে সম্মান করছে না।
১৯ বছর বয়সী হিউনজুং ইউন, ‘ইয়ুথ ক্লাইমেট লিটিগেশ’ গ্রুপের সদস্য। তিনি বলেন আমরা বুঝতে পেরেছি, শুধুমাত্র প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। আর সে করনেই আমাদের ৪ বছরের আইনি পদক্ষেপ ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে। আমরা শুধু জলবায়ু সংকটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতাই বাড়াচ্ছি না, পাশাপাশি মানুষের জীবন রক্ষা করতে লড়াই করে যাচ্ছি।