ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রত্যর্পণের আগ পর্যন্ত হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে

বললেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রত্যর্পণের আগ পর্যন্ত হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে বসে দেশ সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশে তাকে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে পিটিআই।

গত বুধবার পিটিআইকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে ইউনূস আরো ইঙ্গিত দিয়েছেন, হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি হাসিনাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) আরো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া হাসিনা ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের সমালোচনাও করেন। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে পিটিআইকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ককে বাংলাদেশ সম্মান করে এবং এই কারণে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এমন ধারণার বাইরে যেতে হবে যেটাতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থি হিসেবে চিত্রিত করে এবং শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে মনে করা হয়। ড. ইউনূস বলেন, ভারতে হাসিনা অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি (হাসিনা) ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন, এটি সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম; মানুষও এটা ভুলে যেত যদি তিনি তার নিজের জগতেই থাকতেন, কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউই এটা পছন্দ করছে না। এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট হাসিনার বক্তব্যের কথাই উল্লেখ করেন। সেসময় হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে। ড. ইউনূস পিটিআইকে বলেন, এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এটি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। পিটিআই বলছে, ছাত্র-জনতা অভূতপূর্ব সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান। এরপর প্রায় চার সপ্তাহ ধরে ভারতে তার উপস্থিতি বাংলাদেশে অনেক জল্পনাকেই উসকে দিয়েছে।

হাসিনার চুপ থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান ভারতের কাছে জানিয়ে দিয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, মৌখিকভাবে এবং বেশ দৃঢ়ভাবে জানানো হয়েছে যে- তার চুপ থাকা উচিত।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সবাই এটা বোঝে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে- তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি; তাকে সেখানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মেই সেখানে (ভারতে) গেছেন তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন। ইউনূস বলেন, (হাসিনা সরকারের আমলে হওয়া) নৃশংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের জন্যই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হ্যাঁ, তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। হাসিনা যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার সময় ড. ইউনূস ভারতের সাথে সুসম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, নয়াদিল্লিকে এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে যে, শুধুমাত্র হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত