প্রতিবছরই বাংলা ক্যালেন্ডারে শরৎ আসে তবে শরৎ কি শুধু একা আসে! না, এই ঋতুটি আসে তার সব ভালোবাসা ও কাশফুলের শুভ্রতা নিয়ে। বর্ষার মেঘের অন্ধকার ভেদ করে এসে প্রকৃতি প্রেমিকদের মনে আনন্দের দোলা দিতে। প্রতিবারই এসে জানান দেয় ভালোবাসা কাশফুলের শুভ্রতার মতোই সুন্দর, আর মসৃণ। এদিকে শরতের আগমনের সাথে সাথে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে খোলা জায়গায় নদীর পাড়ে দেখা দিয়েছে কাশফুল। বিশেষ করে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এর চারপাশে ও চায়না ইকোনমিক জোনের বিস্তীর্ণ মাঠ ভরে গেছে কাশফুলে। এখানকার শুভ্রতায় আকাশের সাদা ঘন মেঘ যেন পেঁজা তুলোর মতো ধরণীতে নেমে আসে কাশফুল হয়ে। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক কাল্পনিক ছবি। রাস্তার পাশে কাশফুলের এমন সৌন্দর্য নজর কাড়ছে পথচারীর। বাতাসে শুভ্রতা ছড়ানো এমন রূপ লাবণ্যের প্রেমে পড়তে বাধ্য যে কোনো প্রকৃতি প্রেমী। কেইপিজেডের চারপাশে ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে, খালি মাঠে, রাস্তার ধারে কাশফুল ফুটে আছে। বিশেষ করে কেইপিজেডের জেটির দক্ষিণ পাশে যেন কাশফুলের মেলা বসেছে। কয়েক একর জায়গা জুড়ে ফুটে আছে কাশফুল। এসব জায়গায় সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধ থাকলেও প্রকৃতি প্রেমীরা কাশফুলের সঙ্গে প্রেমবন্ধী হওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে ভাঙছে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা। এ সময় কাশফুলের সাথে ছবি তুলতে দেখা যায় কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমীকে। কাশফুলে ঘুরতে আসা জাহিদ হাসান হৃদয় নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমার একটু ইউটিউব চ্যানেল আছে। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরি সেখানে। তাই আজ কাশফুল নিয়ে একটা ভিডিও বানাতে আসলাম। অন্যান্য ফুলের তুলনায় কাশফুলের প্রতি নেটিজেনদের আকর্ষণ একটু বেশি। রিয়াদ হোসেন নামের আরেক কাশফুল প্রেমিক জানান, কাশফুল আমাকে বরাবরের মতোই মুগ্ধ করে, যদিও কাশফুলের উচ্চতা আমার উচ্চতার চেয়ে বেশি। কেইপিজেডে কাশফুল ফোটার খবর পেয়ে এখানে চলে আসছি। বাংলা সাহিত্যে কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে। তবে নগারয়ন এবং শিল্পায়নের ফলে কাশফুলের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথমত জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশফুল কমে আসার বিষয়টিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তবে খোলা চোখে যা দেখা যায় তা হলো, কাশফুল জন্মানোর প্রধান জায়গা হচ্ছে নদীর তীর। এখন ধীরে ধীরে নদীর তীর দখল হয়ে যাচ্ছে। কৃষি কাজ করা হচ্ছে, বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে যার ফলে কাশফুল ফোটার জায়গা সংকীর্ণ হয়ে আসছে।