ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জামিনে মুক্তি ৫ জঙ্গি ৬ শীর্ষ সন্ত্রাসী

জামিনে মুক্তি ৫ জঙ্গি ৬ শীর্ষ সন্ত্রাসী

‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’ মধ্যে আরো ৫ জন গত এক মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তারা হলেন, সানজিদুল ইসলাম ইমন, আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস, টিটন, পিচ্চি হেলাল ও ফ্রিডম রাসু।

জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন অন্তত ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা একাধিক সন্ত্রাসী দেশে ফিরেছেন বলে খবর ডয়চে ভেলে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানীও কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। নরসিংদী ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বহু জঙ্গি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে অনেক থানা থেকে অস্ত্র, গোলা-বারুদ লুট হয়। সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে অন্তত ৪৫০টি কমবেশি ‘আক্রান্ত’ হয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। তখন তারা জানিয়েছিল, এই থানাগুলো থেকে অস্ত্র, গোলা-বারুদ লুট হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ওই সময় সর্বমোট পাঁচ হাজার ৮১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া যায়। ১ হাজার ৮৯০টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, যার মধ্যে রয়েছে, চায়না রাইফেল ২৯৬টি, রাইফেল ৮টি (বিডি) একটি, এসএমজি-টি ৫৬ (চায়না) ৬০টি, এলএমজি-টি ৫৬ (চায়না ১১টি, পিস্তল-টি ৫৪ (চায়না) ৮৩১টি, এসএমজি-এসএমটি একটি, ১২ বোর শটগান ৫৬৬টি, ৩৮ মি.মি. গ্যাস গান (সিঙ্গেল শট) ১১৭টি, টিয়ার গ্যাস লাঞ্চার (সিক্স শট) ৫টি এবং ২৬ মি.মি. সিগন্যাল পিস্তল দু’টি। গোলাবারুদের মধ্যে দুই লাখ ৯৫ হাজার ২২৭টি বিভিন্ন বোরের গুলি, বিভিন্ন ধরনের টিয়ার শেল ৮৮৭৮টি, সাউন্ড গ্রেনেড ২৫৬৪টি, কালার স্মোক গ্রেনেড ৭৮টি, সেভেন-মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড ৩৭টি, ফ্ল্যাশ ব্যাং-৬ ব্যাং গ্রেনেড ৩৬০টি এবং হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে (ক্যানিস্টার) ৮৩টি এখনো উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার করা যায়নি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬ রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল গোলাবারুদ। লুট হওয়া অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনো উদ্ধারের অপেক্ষায় এমন এক সময়ে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কারামুক্তি নিরাপত্তা সংকট বাড়াতে পারে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, যারা জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হচ্ছে, তাদের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কিভাবে তারা জামিন পাচ্ছেন সেটা আদালতের বিষয়। কিন্তু জেল ভেঙে যে জঙ্গিরা পালিয়েছে তারা তো অবশ্যই নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমনকি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন যে উদ্ধার হয়নি সেটাও তো উদ্বেগের। এছাড়া গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে এসএসএফের যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো কোনোভাবেই সাধারণ নাগরিকের কাছে, এমনকি পুলিশের কাছেও থাকা উচিত নয়। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থাকলে যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পারিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অন্তত ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ১৫-২০ বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের সবার বিরুদ্ধেই ৭ থেকে ১৫টি মামলা রয়েছে। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর একে একে তারা কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাজধানীর পূর্ব রাজা বাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম, ওরফে সুইডেন আসলাম। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে শেখ আসলাম কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। তার জামিনের কাগজপত্র এলে তা যাচাই-বাছাই শেষে মঙ্গলবার রাতেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সুইডেন আসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা ছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও এলাকায় গালিব হত্যাসহ ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’ মধ্যে আরো ৫ জন গত এক মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

তারা হলেন- সানজিদুল ইসলাম ইমন, আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস, টিটন, পিচ্চি হেলাল ও ফ্রিডম রাসু। গত ১৪ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমন মুক্তি পান। একই সময়ে ইমনের প্রধান সহযোগী মামুনও জামিনে মুক্তি পান। এর আগে ১২ আগষ্ট একই কারাগার থেকে মুক্তি পান ফ্রিডম রাসু ও পিচ্চি হেলাল। রাসুর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকা প্রকাশের আগেই পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। ২৩ ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’র তালিকার ২ নম্বরে টিটনের নাম। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ডিবি অবৈধ পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে। গত ১২ আগস্ট কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান টিটন। ১৩ আগষ্ট কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস। রাজধানীর কাফরুল, কচুক্ষেত ও ইব্রাহিমপুর এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ছিলেন আব্বাস। তার বিরুদ্ধে ৬টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা বিচারাধীন। তবে এই ১০ টি মামলায় একে একে তিনি জামিন পান। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’দের জামিনে মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ডয়েচে ভেলেকে বলেন, একজন মানুষ তো সারাজীবন কারাগারে থাকতে পারে না।

আদালত যদি জামিন দেয়, তাহলে মুক্তিতে সমস্যা কী? জোর করে তো আর তাকে কারাগারে আটকে রাখা যাবে না। তবে, হ্যাঁ, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার দিকে নজরদারি অবহ্যত রাখতে হবে। তিনি যদি অপরাধ জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তো ভালো কথা। কিন্তু তিনি যদি আবারও অপরাধ জগতে ফিরে যান, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবারও তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করবে। কাউকে জোর করে কারাগারে আটকে রাখা ঠিক না।নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-র প্রধান মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত রবিবার দুপুরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে জসিম উদ্দীন রাহমানীকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। সেই সাজা ভোগ করা হয়ে গেছে। এছাড়া আরো পাঁচটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেগুলোতে তিনি জামিন পেয়েছেন। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাহমানীকে। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন। জঙ্গি তৎপরতা, সরকার ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জসিম উদ্দিন রাহমানীর বিরুদ্ধে আরো পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। সেগুলোতেও এরই মধ্যে তিনি জামিন পেয়েছেন। এদিকে গত ৭ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বিক্ষোভের সময় কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যান। বন্দি পালানো ঠেকাতে গুলি ছোঁড়েন কারারক্ষীরা। এতে ছয়জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে তিন জঙ্গিও ছিল।

তিনজনই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। নিহত ছয়জন হলেন- হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার আসামি নরসিংদীর নলভাটা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মো. জিন্নাহ (২৮), নওগাঁর কাঞ্চনপুর এলাকার আবদুস সালামের ছেলে আসলাম হোসেন মোহন, হোলি আর্টিজান মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আফজাল হোসেন (৬৩), হত্যা মামলার আসামি মৌলভীবাজারের রামেশ্বপুরের মকবুল মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ পাভেল (২৪), ছিনতাই মামলার আসামি টাঙ্গাইলের তারটিয়া এলাকার রাজ্জাক শেখের ছেলে স্বপন শেখ (৪০) ও সুনামগঞ্জের জলোশা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আয়াতুল্লাহ (৩৯)। পালিয়ে যাওয়া ২০৯ জনের মধ্যেও বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। এছাড়া গত ২০ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোদ্ধারা। এদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৫ জন এখনো পলাতক। ওই সময় কারাগার থেকে বেশ কিছু অস্ত্র লুট হয়, পালিয়ে যায় প্রায় ৯ শতাধিক আসামি। লুট হওয়া ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২০টি চায়না রাইফেল, ১৫টি রাইফেল এবং ১০টি শটগানসহ ৪৫টি অস্ত্র, ১ হাজার ৯১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের সহায়তায় পালিয়ে যাওয়া ৪৮১ জন কয়েদি আত্মসমর্পণ করেছেন। এখনো পলাতক রয়েছেন বিভিন্ন মামলার প্রায় দুই শতাধিক আসামি।

এসব আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা নিরাপদ কিনা জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, অবৈধ কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা ঠিক না। এর কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনো সময় অবনতি হতে পারে। এই মুহুর্তে সরকারের কাজ হবে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে মনোযোগ দেওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত