হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের হাফিজপুর গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে প্রায় ২৫ শতক জমিতে মালচিং পেপার পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষ করে কৃষক আব্দুস ছালাম চমক দেখিয়েছেন।
অসময়ে গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড জাতের হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ চাষে তিনি পোকা দমনে ব্যবহার করেছেন হলুদ ফাঁদ ও ফেরোমন ফাঁদ। জমিতে প্রয়োগ করেছেন গোবর ও কিছু পরিমাণে সার। এসব ব্যবহার করায় তরমুজের প্রচুর ফলন হয়েছে। রাসায়নিক ব্যবহার না করায় তার উৎপাদিত তরমুজ বিষমুক্ত। বর্ষাকালে ফলন এতটাই ভালো হয়েছে যে, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর খেতেও রসালো ও সুস্বাদু এই তরমুজ। বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। হাফিজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে মাচায় ঝুলছে হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ। ছোট-বড় তরমুজে নুয়ে পড়েছে মাচা। এখানে কালোর চেয়ে হলুদ রঙের তরমুজ বেশী ফলন হয়েছে। দেখতে যেন হলুদের সমারোহ। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে পোকা দমনে ব্যবহার হয়েছে ফেরোমন ফাঁদ। তাতে তেমন একটা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি। এ তরমুজ দেখতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।
বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের পরামর্শ গ্রহণ করে হলুদ রঙের তরমুজের চাষ করেন কৃষক আব্দুস ছালাম। হাইব্রিড জাতের এ তরমুজ চাষে সফল হবেন বলে আশাবাদী ওই কৃষক। এর আগে একই জমিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আব্দুস ছালাম। স্থানীয় কৃষক তৌহিদ মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে মাচায় কালো রঙের তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছি। এবার কৃষক আব্দুস ছালাম হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ চাষ করে সফল। আগামীতে আমিও তরমুজ চাষ করতে চাই। কারণ অসময়ে তরমুজ চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব।
স্থানীয় কৃষক শাহীন মিয়া, আফরোজ মিয়া, ফয়সল মিয়া বলেন- গ্রীষ্মকালে রোপণকৃত গাছে গাছে তরমুজ মাচায় ঝুলছে। এ দৃশ্য আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। আগামীতে আমরাও নিজ নিজ জমিতে এ জাতের তরমুজ চাষ করতে চাই।
কৃষক আব্দুস ছালাম জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। পরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ বছর তিনি ২৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেন। তরমুজ চাষে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বর্তমান বাজারে হলুদ রঙের তরমুজের প্রতি কেজির দাম প্রায় একশ টাকা। সে হিসেবে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন কৃষক আব্দুস ছালাম।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষক আব্দুস ছালাম হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ আবাদ করে চমক দেখিয়েছেন। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে। তার তরমুজ চাষে সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও আমার কাছে পরামর্শ চাইছেন। আমি পরামর্শ দিয়েছি। এক কথায় হলুদ রঙের তরমুজ চাষে আব্দুস ছালামের বাজিমাত।
বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, তরমুজ চাষ বাহুবলে ছিল না। আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়েছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামে হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ চাষ করেন কৃষক আব্দুস ছালাম। তার প্রায় ২৫ শতক জমিতে চাষকৃত হলুদ ও কালো তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে প্রমাণ হলো, হলুদ রঙের তরমুজ চাষে বাহুবলের মাটি বেশ উপযোগী। এ জাতের তরমুজ রসালো। খেতেও সুস্বাদু।