দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে, প্রবাসী অধিকার আন্দোলন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার পদ্ধতি সহজ ও স্মার্ট করার আহ্বান জানান আলোচকরা।
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে দেড় কোটির বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে দেড় কোটি প্রবাসী ভোটার কর্মসূত্রে বিদেশে অবস্থান করছেন। যা মোট ভোটারের শতকরা ১৩ ভাগ।
২০০৮ সাল থেকে ‘পোস্টাল ব্যালট’-এর মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও জটিল পদ্ধতি ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় প্রবাসীরা ভোট দিতে আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন চায় প্রবাসী অধিকার আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক নূরুল মোস্তফা খোকন জানান, অর্থনীতিতে প্রবাসীদের বিপুল অবদান থাকলেও, ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে তারা ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১২০টি দেশ তাদের প্রবাসে থাকা জনগণের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সময় এই বিষয়টিতে জোর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি দেশে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বিক্ষোভ করে। এতে সেই দেশটির সরকার ৫৭ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়। পরে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তাদের ক্ষমা করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটি। আলোচকদের আহ্বান, এই প্রবাসীদের সে দেশেই কাজের সুযোগ ফিরিয়ে দেয়া আহ্বান জানান বক্তারা।
প্রবাসে ভোট দেয়ার অধিকারের দাবি : ১. বিদেশে প্রবাসীদের অংশগ্রহণে এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স এমনকি বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে কেন প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবে না? বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি/কনস্যুলেট অফিসে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. দেশের অর্থনীতিতে যেহেতু প্রবাসীদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে সে কারণে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে কারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন সে ব্যাপারে প্রবাসীদের মতামত নিতে হবে।
৩. আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন অথবা যে সব দেশে বাংলাদেশের সাথে সময়ের পার্থক্য কম সেই সব দেশে একই দিনে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য খুব বেশি না, তাই এই সব দেশগুলোতে একই দিন ভোট হতে পারে। নির্বাচনের দিন ‘পোলিং বুথ’ স্থাপন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস অফিসে। ভোট দেয়ার পর দূতাবাস অফিসে সবার সামনে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভোটগণনা করতে হবে। ভোটের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন প্রিসাইডিং, পোলিং ও রিটার্নিং অফিসার।
৪. বিদেশে কর্মক্ষেত্রে প্রবাসীদের নানা ব্যস্ততা থাকায় তারা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। সেজন্য তাদের জন্য ‘অ্যাডভান্সড ভোটিং সিস্টেম’ চালু করতে হবে।
৫. বিদেশে পোস্টাল ব্যালট সিস্টেমে ভোট দেয়া দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। তাই ভোটদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ও সময় বাঁচাতে ডিজিটাল বা অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
৬. ‘অনলাইনে পোলিং সিস্টেম’ চালু করলেও সেটি যাতে ম্যানুপুলেট বা হ্যাকিং এর শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. ভোট দেয়ার পদ্ধতি স্মার্ট, সহজ ও দ্রুত করতে হবে।
৮. ইলেকশন কমিশনের নির্ধারিত ‘অ্যাপস’ ডাউনলোড করে নিবন্ধিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় যেন প্রবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মতামতের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তা না হলে প্রবাসীরা এই রাষ্ট্রের সংস্কার বা পুনঃনির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। প্রবাসীরা চান তাদের ভোটাধিকার পদ্ধতি যেন সহজ, স্মার্ট ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে হয়। নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনি আইন ও ব্যবস্থাপনা সীমাবদ্ধতায় প্রবাসীদের ভোটের অধিকার ব্যাহত হওয়া সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করার শামিল। তাই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা আকাশ সমান। আমরা চাই, আপনারা প্রবাসীদের কথা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করুন। তাদের ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করুন। বিদেশে প্রবাসীরা দিন-রাত অমানুষিক পরিশ্রম করে এই দেশ, মা, মাটি ও মানুষের জন্য দু’হাত ভরে দিচ্ছে। আপনারাও তাদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দিন। সবশেষে-আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার পদ্ধতি সংশোধন করে তাদের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি ও জানান তারা।