সুসংবাদ প্রতিদিন

মোরেলগঞ্জে মিষ্টি মাল্টার বাম্পার ফলন

কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসএম সাইফুল ইসলাম কবির, মোরেলগঞ্জ

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ লবণাক্ত জমিতে শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি মাল্টা সুস্বাদু ফলের মধ্যে অন্যতম। ভিটামিন সিসমৃদ্ধ এই ফলটির জন্য সুন্দরবনের উপকূলীয় মোরেলগঞ্জ এলাকা আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলের ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর চাষ। মাল্টার বাণিজ্যিক চাষে ভাগ্য বদলেছে মোরেলগঞ্জের অনেক কৃষকের। ভালো দাম পেয়ে চাষির মুখে হাসির ঝিলিক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে মাল্টার চাষাবাদ করছেন সাধারণ কৃষকরা। মিষ্টি জাতের বারি মাল্টায় বাজার ভরে ওঠায় এবার বিদেশি মাল্টা জায়গা নিতে বেশ একটা। সুস্বাদু ফল মাল্টা কমলার একটি উন্নত জাত, মোরেলগঞ্জের বাণিজ্যিক পর্যায়ে মাল্টার চাষাবাদ বেড়েছে আগের তুলনায়। শুধু তাই নয়, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই গ্রামের মিষ্টি মাল্টা পাইকারদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে সারা দেশে। উৎপাদিত এসব মাল্টার রং সবুজ দেখতে অনেকটা মিষ্টি লেবুর মত। অনেকের বাড়ির আঙ্গিনায়ও হচ্ছে মাল্টার চাষ। বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে দেখেছেন লাভের মুখ। শুধু তা নয় বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন মাল্টা কিনতে। জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শতশত চাষিদের তাদের পতিত জমি ফেলে না রাখার জন্য নানা ধরণের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। শুধু তাই নয়, তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন সেজন্য তাদের হাতে-কলমে মাল্টা চাষের উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলা মাল্টা চাষি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অরেন্ট অফিসার হেমায়েত শিকদার, হাবিবুর রহমান, মোস্তফা, সিরাজ, ইসলাম ও রিপন বলেন, আমার বাড়ির পাশের ৪০ শতক জায়গায় ২০০টি মাল্টা চারা লাগিয়েছি। ইতোমধ্যে এ বছর মাল্টা বিক্রি করে এক লাখ বিশ হাজার টাকার মতো আয় করেছি। কিছু মাল্টা ঝরে যাচ্ছে, বুঝতেছি না কি করা যায়। স্থানীয় বারি মাল্টা-১ বেশ সুস্বাদু। ক্রেতারা এর বেশ প্রশংসা করে। যেহেতু কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার হয় না তাই সকলেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধে ক্রয় করছেন। ২০১৫ সালে তিনি ওই বাগানে মাল্টা চাষ শুরু করেন। গত বছর থেকে তিনি মাল্টার ফল পাওয়া শুরু করেছেন। হেমায়েত শিকদারের দাবি, তিনিই এ উপজেলায় প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি ১ একর জমির ওপর গড়ে তুলেন তার মাল্টা বাগান। তিনি তার এ ফলদ বাগানে বারী-১ জাতের ২০০টি মাল্টা গাছ রোপন করেন। একই বাগানে তিনি সাথী ফল হিসেবে লিচু, আমলকী, কমলা, থাই সরুপা, জাম্বুরা, কাগজী লেবু, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেন। মাল্টা চাষের ১ বছরের ব্যবধানে তার মাল্টা গাছে ফল ধরা শুরু করে। তার বাগানের প্রতিটি মাল্টা গাছে এখন ৬০/৭০ টি করে মাল্টা ঝুলছে। এ মাল্টা খেতেও বেশ মিষ্টি। বছরের ৮ মাস গাছে মাল্টা থাকবে এবং এই ৮ মাসে প্রতিটি গাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ কেজি মাল্টা পাওয়া যাবে। মাল্টা পাকার সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে ফল ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকেই মাল্টা কিনে নিয়ে যায়। মোরেলগঞ্জ উপজেলা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অরেন্ট অফিসার মাল্টা চাষী হেমায়েত শিকদার জানান, গত বছরে তিনি তার মাল্টা বাগান থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এছাড়াও তিনি তার এ বাগান থেকে অন্য ফল বিক্রি করে বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি জানান, অবসর জীবনে তার এ বাগানের আয় তার পরিবারের স্বভাবিক খরচ মেটানোর পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। তার সন্তানরা সবাই আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। বড় মেয়ে ডা. রুমানা আফরোজ এমবিবিএস করার পর এফসিপিএস সম্পন্ন করেছে, ছেলে রিশাদ হাসান ম্যারিন ইঞ্জিনিয়র হিসেবে ভিয়েতনামে কর্মরত, ছোট ছেলে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়র। মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সিড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরিব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চাষীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছি। মাল্টা চাষ করে অধিকাংশ কৃষকের ভাগ্য বদলেছে। মাল্টা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের কৃষকরা বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে মাল্টা চাষ করছেন। বিশেষত বারি মাল্টা-১ চাষ করছেন। এখন মূলত কৃষকদের আমরা মাল্টা সঠিক সময়ে হারভেস্টিং এর বিষয়টি প্রচার করছি। বারি মাল্টা-১ সঠিকভাবে পরিপক্ক হলে ফল আকারে বড় হয়। ফলের বোটার দিকের কোচকানো ভাবটা কমে গিয়ে প্রায় মসৃণ হয়ে যাবে। ফলের নিচের দিকের পয়সা আকৃতির চিহ্নটি স্পষ্ট থেকে কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে যাবে। ফলের রং গাঢ় সবুজ হতে হালকা সবুজ রং ধারণ করবে। বারি মাল্টা-১ আগাম হারভেস্টিংয়ের কারণে ফল অপরিপক্ব থাকে। ফল পর্যাপ্ত রসালো হয় না, সেই সাথে কিছুটা পানসে টক স্বাদযুক্ত হয়। কাজেই কৃষকদের কাছে আমাদের পরামর্শ হলো, সঠিক সময়ে বারি মাল্টা-১ হারভেস্ট করুন, এতে মাল্টার সঠিক দাম কৃষক পাবেন। এ বছর প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে মাল্টার বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০০০ মেট্রিক টন।