২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রাহের সময় ৫৭ অফিসার হত্যার ঘটনা পুনরায় তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার ৯ আইনজীবী ও একজন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে ই-মেইলযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশ দাতারা হলেন : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট মো. শাহেদ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার সলিম উল্লাহ, অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর মো. কাউসার, ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ফের তদন্ত করতে নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন ও ওই ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে। বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসেনি। অনেক নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ বলেছেন, বিডিআর সদর দপ্তরের নৃসংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, সেনা অফিসারদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল নোটিশ গ্রহীতাদের। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী এই দায়িত্ব রক্ষায় নোটিশ গ্রহীতরা ব্যর্থ হয়েছেন। তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ওই ঘটনা আবার তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে। নোটিশ গ্রহীতরা ব্যবস্থা না নিলে বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে (বর্তমানে বিজিবি) ভয়াবহ, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিদ্রোহের নামে সংঘটিত ওই ঘটনার প্রকৃত কারণ ও চিত্র উদ্ঘাটনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি পেশার মানুষের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই দাবি জানানো হয়। ওই ঘটনায় হাজারো বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয়। শুরু থেকেই ওই বিচারের নিরপেক্ষতা, উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে আনা মামলায় নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টেও রায় হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের আনা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স এর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বৃহত্তর বেঞ্চ ১৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
এই মামলা আসামি রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকার সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ওই ঘটনায় নিহত সেনা পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও ওই ঘটনায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের দায়ী করে প্রকৃত ঘটনা তুলে আনাসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দাবি জানান। ওই সময়ের সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের সম্প্রীতি দেয়া বক্তব্যে এ দাবি আরো জোরালো হয়েছে।