প্রধান বিচারপতিকে গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের স্মারকলিপি
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে বহু মানুষকে গুম ও অপহরণ করা হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে পেতে বছরের পর বছর স্বজনরা দাবি তুললেও খোঁজ মেলেনি। এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুম করা ব্যক্তিদের জীবিত ফেরত ও নির্যাতনের বিচার পেতে ‘গুম পরিবারের সদস্য’ ব্যানারে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে মো. বেল্লাল হোসেন সই করা এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানান, গুম হওয়া ৬৪ ব্যক্তির তালিকাসংবলিত স্মারকলিপির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তা সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর ধারাবাহিকতায় স্মারকলিপিটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার সই করা চিঠিসহ স্মারকলিপিটি তদন্ত কমিশনে পাঠানো হয়েছে। স্মারকলিপিতে গুমের অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ, গুমের শিকার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও সরকারি খরচে মামলা পরিচালনার সুযোগসহ আটটি বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৬৪ জন ব্যক্তির ছবি ও নামণ্ডঠিকানা যুক্ত করা হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন। কমিশনকে তদন্ত করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা ‘গুম পরিবারের সদস্য’র ব্যানারে গত ২৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদানের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যান, পরে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। স্মারকলিপিতে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দের আর্থিক ও মানসিক দুর্দশার বিবরণের পাশাপাশি গুমের অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ, গুমের শিকার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান, সরকারি খরচে মামলা পরিচালনার সুযোগ প্রদান, গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের জন্য বিশেষ সনদ প্রদানসহ আটটি বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সহযোগিতা কামনা করা হয়। এছাড়া, গুম পরিবারের সদস্যদের প্রধান সমন্বয়ক মো. বেল্লাল হোসেনের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া মোট ৬৪ জন ব্যক্তির ছবি ও নাম, ঠিকানা তালিকা সংযুক্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনমূলে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক সংঘটিত জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের নিমিত্ত ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কর্মপরিধি হিসেবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাদের শনাক্ত করা এবং কি পরিস্থিতিতে তাদের গুম করা হয়েছিলো তা নির্ধারণ করা, গুমের ঘটনাসমূহের বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা এবং সুপারিশ প্রদান করাসহ গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অবহিত করার বিষয়গুলো রয়েছে। স্মারকলিপির সঙ্গে সংযুক্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকাসহ স্মারকলিপিতে বর্ণিত বিষয়গুলো এ সংক্রান্তে গঠিত কমিশনের তদন্ত কার্যে সহায়ক হতে পারে এবং কমিশনের কার্যপরিধিতে গুমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তাই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি গুম হওয়া ৬৪ জন ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত উক্ত স্মারকলিপিটি জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্য-বিশিষ্ট তদন্ত কমিশনের সভাপতির নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত একটি চিঠিসহ স্মারকলিপিটি জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন বহু মানুষকে ‘গুম’ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন আর সমালোচনার মুখে পড়েছিল শেখ হাসিনা সরকার উল্টো তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা নিজেরাই আত্মগোপনে আছে।