সুসংবাদ প্রতিদিন
পাটে লাভবান রংপুর অঞ্চলের কৃষক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর
সোনালী আঁশ পাট। রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার পাটচাষিরা চলতি মৌসুমে অর্থকরী ফসল বিক্রি করে সন্তোষজনক মুনাফা পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রংপুরের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫টি জেলায় প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪ বেল পাট। জেলাগুলো হলো রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট।
রংপুর ডিএই তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় পাট চাষাবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। যেখানে গত বছর পাট চাষ হয়েছিল ৯ হাজার ৭৬৮ হেক্টর আর ২০২২ সালে সেটি ছিল ১০ হাজার ৫৮ হেক্টরে। অর্থাৎ তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর দুই থেকে ৪০০ হেক্টর করে পাট চাষাবাদ কমছে রংপুরে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছিল। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টরে। এই পরিসংখ্যান গত ১০ বছরে নিয়ে গেলে দেখা যায়, এই অঞ্চলে পাট চাষ কমেছে অন্তত ৪০ শতাংশ। আর ২০ বছরের পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে এ অঞ্চলে তুলনা মূলকভাবে পাট চাষ কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। সূত্র জানায়, এক হেক্টর জমিতে কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৫৮ মণ পাট উৎপাদন করা যায়। বর্তমানে এ অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় যা গত বছর ছিল ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রতি মণ পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
সন্তোষ প্রকাশ করে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার নবদিগঞ্জ এলাকার পাটচাষি ভুবেন বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ২ একর জমিতে পাট চাষ করে প্রায় ৪৫ মণ ফলন পেয়েছেন। এটি বিক্রি থেকে তিনি প্রায় ১,৩১,০০০ টাকা আয় করেছেন। তিনি একই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৭০ মণ পাটকাঠি বিক্রি করার আশা করছেন এবং এর দাম প্রায় ৩৫,০০০ টাকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকার আরেক চাষি মো. হামিদুল বলেন, চাষের প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষকরা প্রকৃতির বিরুদ্ধ আচরণ দেখে হতাশ হয়ে পড়ে, কারণ এই অঞ্চলে খরার মতো পরিস্থিতি দেখা গেছে।
কিন্তু পরবর্তীকালে, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত চাষিদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এসেছিল এবং তাদের হতাশা ও বিষাদ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল। তিনি জানান, এ বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন এবং ভালো লাভের ব্যাপারেও আশাবাদী। তিনি বলেন, পাটচাষিরা পাট ও পাটের কাঠি বিক্রি করে আয় করতে পারেন। সুতরাং, এর চাষ লাভজনক।
ডিএই’র রংপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ ডক্টর মো. আবু সায়েম বলেন, পাট চাষ করে চাষিরা যেমন ভালো লাভবান হচ্ছেন, তেমনি আগামী মৌসুমেও ফসল চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে এই অঞ্চলের চাষিরা বিভিন্ন জলাশয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ফিতা ছিঁড়ে না দিয়ে পাট কাটাচ্ছেন। কৃষিবিদ মো. এনামুল হক, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, ডিএই, রংপুর বলেন, কৃষকদের অনীহার কারণে তাদের মধ্যে প্রযুক্তিটি এখনো চালু হয়নি। তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতির তুলনায় ফিতা রেটিং পদ্ধতিতে পানির পরিমাণ কম লাগে। কিন্তু চাষিরা ঐতিহ্যগত পদ্ধতিটিকে এর চেয়ে সহজ বিবেচনা করে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে তাদের অনীহা প্রকাশ করে, তিনি যোগ করেন।
গত শনিবার দুপুরে রংপুর ডিএই অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওবায়দুর রহমান স্বীকার করে বলেন, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলার প্রতি বছর পাটের আবাদ কম হচ্ছে। উল্লেখ্য যোগ্য কারণ হিসেবে তিনি বলেন এ অঞ্চলে সময় মতো পানির অভাব। কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে ফিতা ছিঁড়ে না দিয়ে পাট কাটাচ্ছেন। কৃষক বীজ ঠিক সময় পায় না। সরকারি প্রণোদনা খুবই কম। তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে আরো গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান। আগামীতে সোনালি আঁশে কৃষক সুফল পাবে।