ঢাকা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

মেরুকেন্দ্রে রহস্যময় তড়িৎ ক্ষেত্র

মেরুকেন্দ্রে রহস্যময় তড়িৎ ক্ষেত্র

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসাসহ বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা থেকে পৃথিবীর বাইরের অংশে মহাকাশযান পাঠানো শুরু হয়। ওই সময় থেকেই এসব মহাকাশ সংস্থাগুলো পৃথিবীর মেরুকেন্দ্রিক কিছু অদ্ভুত ও রহস্যময় ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। দেখা যায়, পৃথিবীর বাইরের অংশে মহাকাশযান নিজ কক্ষপথে চলতে চলতে যখন মেরুকেন্দ্রের কাছাকাছি আসে, তখন বায়ুমণ্ডল থেকে নির্গত বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত সুপারসনিক কণার সঙ্গে আকস্মিক সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা মেরু থেকে বায়ুমণ্ডলে যাওয়া কণার স্রোত সম্পর্কে জানলেও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এর আসল রহস্য এত দিন বের করতে পারেননি। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় নাসা এবার এই রহস্যের কিনারা করতে পেরেছে।

নাসার বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত সুপারসনিক কণা নির্গতের জন্য প্রায় অদৃশ্য একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত নাসার ‘এনডিউরেন্স’ মহাকাশযানের সাম্প্রতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এই তড়িৎ ক্ষেত্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। এই তড়িৎ ক্ষেত্রকে ‘অ্যাম্বিপোলার’ বলা হচ্ছে। নাসার তথ্য মতে, বিভিন্ন কণা বৈদ্যুতিক চার্জের কারণে বায়ুমণ্ডল থেকে ১৫০ মাইল উপরে পৃষ্ঠে ছুটে যাচ্ছে। সেই উচ্চতায় আমাদের বায়ুমণ্ডলের পরমাণু বিচ্ছিন্ন হয়ে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন ও ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হতে শুরু করে। যেহেতু এসব আয়ন ইলেকট্রনের চেয়ে ১ হাজার ৮৩৬ গুণ ভারী, তাই তারা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর দিকে চলে আসে। আবার যেহেতু তাদের বিপরীত চার্জ রয়েছে, তাই ইলেকট্রন ও আয়ন একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের দ্বারা একত্র হয়, যা তাদের উভয়কে টেনে আনছে। এই শক্তিকের নাম দেয়া হয়েছে ‘অ্যাম্বিপোলার’।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যাম্বিপোলার তড়িৎ ক্ষেত্রটি মেরু অঞ্চলের বায়ুর মূল চালক, যা পৃথিবীর এ অঞ্চলের উপর ঘটে যাওয়া চার্জযুক্ত বিভিন্ন কণার মহাকাশে অবিচ্ছিন্ন বহিঃপ্রবাহ। অর্থাৎ পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলের চার্জযুক্ত বিভিন্ন কণাকে অন্য কোথাও যাওয়া ঠেকাতে এসব কণাকে বেশি উচ্চতায় নিয়ে যায় এই তড়িৎ ক্ষেত্রটি। তারা আরো বলছেন, পৃথিবীর চারপাশে থাকা অ্যাম্বিপোলার নামের তড়িৎ ক্ষেত্রটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরকে মহাকাশে ধরে রাখার কাজ করছে। আর তাই এই তড়িৎ ক্ষেত্রটিকে মাধ্যাকর্ষণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, বিশেষ করে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের ওপর এর প্রভাব বেশি। তবে পৃথিবীর বিকাশের সঙ্গে অ্যাম্বিপোলার তড়িৎ ক্ষেত্রটির প্রভাব সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত