জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অভিভাবকহীন ক্যাম্পাসের স্থবির সব কার্যক্রম

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাজেদুর রহমান, জবি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম। একই সঙ্গে ইস্তফা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্ট, পরিবহন প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা। এরপর এখনো নিয়োগ হয়নি উপাচার্য। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধানদের পদও শূন্য রয়েছে। হচ্ছে না সিন্ডিকেট সভা ও একাডেমিক কাউন্সিল। এতে বেড়েছে প্রশাসনিক জটিলতা। মূলত উপাচার্যহীনতায় স্থবির হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কার্যক্রম। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম চললেও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই প্রক্টর। একমাত্র ছাত্রী হল প্রভোস্টের পদ শূন্য থাকায় সেখানেও দেখা দিয়েছে সংকট। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছেন না হল দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে তারও অভিযোগ জানাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সবার প্রশ্ন, এই স্থবিরতা কাটবে কবে? এক মাস পেরোলেও এখনো মেলেনি জবির উপাচার্য। সংকট নিরসনে সবার দাবি দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ। উপাচার্য ড. সাদেকা হালিমের পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচি ও গেটলক কর্মসূচি, শিক্ষা সচিবকে স্মারকলিপি প্রদানসহ চলছে লাগাতার কর্মসূচি। এরই মধ্যে দেশের প্রধান সারির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হলেও বাকি রয়েছে জবি। আন্দোলনকারীদের দাবি দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হোক। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য তিনজন সিনিয়র অধ্যাপককে নিয়ে বিভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জবির বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, সমাজকর্ম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রেজাউল করিম ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক পেয়ার আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের জন্য অতি দ্রুত আমাদের একজন ভিসি প্রয়োজন। দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় অনেক জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য নিয়োগ হয়ে গেছে। আমরা অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই ভিসি নিয়োগ চাই। ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন উপাচার্য শূন্য থাকলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়। আপগ্রেডেশন এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যতা তৈরি হয়। শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক পরিমল বালা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু কাজ রয়েছে যা উপাচার্য ছাড়া সম্ভব নয়। একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট মিটিংও উপাচার্য ছাড়া সম্ভব নয়। উপাচার্য না থাকলে এসব ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ হলে এসব সমাধান হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর প্রধানও নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, জটিলতা প্রধানত হলো বেশকিছু সিদ্ধান্ত একাডেমি কাউন্সিলে, সিন্ডিকেট সভায় নিতে হয়। সেই মিটিংগুলো উপাচার্য আহ্বান করেন। আরেকটা বিষয় এখন প্রক্টর, প্রভোস্ট, পরিবহন প্রশাসক কেউ নেই। এটা সমস্যা। একজনকেই সবকিছু বহন করতে হয়।