বৈরী আবহাওয়ায় অন্ধকারে ভোলাবাসী

* ৫ ট্রলারডুবি * ৪৯ জেলে উদ্ধার

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফরহাদ হোসেন, ভোলা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভোলায় টানা বৃষ্টি ও ঝড়োবাতাস বইছে। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদী ও সাগরের পানি। ঝড়োবাতাসে চরফ্যাশন ও মনপুরার সাগার মোহনায় এখন পর্যন্ত ৫টি জেলে ট্রলার ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে ৪৯ জন মাঝিমাল্লাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

বৈরী আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ভোলার অভ্যন্তরীণ চারটি রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের লঞ্চণ্ডসিট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। গত শুক্রবার দুপুর থেকে জেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে রয়েছে সাত উপজেলার মানুষ। জানা গেছে, গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগর মোহনায় মাছ ধরতে যায় জেলেরা। বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়োবাতাসে চরফ্যাশন ও মনপুরার সাগার মোহনায় ৫টি ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে ৪টি ট্রলার ডুবছে খরচির চর এলাকায়। অপরটি ডুবেছে ঢালচর এলাকার বঙ্গোপসাগর মোহনায়। ডুবে যাওয়া ৪টি ট্রলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের উৎপল মাঝি, স্বপন মাঝি, বাকের মাঝি ও আব্দুল হান্নান দফতরির। অপরটি হলো ঢালচর ইউনিয়নের মো. আকতার মাঝির।

ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি আকতার, উৎপল, বাকের জানান, গত শুক্রবার দুপুর থেকে হঠাৎ করে বঙ্গোপসাগর মোহনায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। এসময় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝিরা সাগর থেকে নিরাপদ জায়গায় আসতে শুরু করেন। বিকালের দিকে প্রবল ঢেউয়ের চাপে আকতার মাঝির ট্রলারটি ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে ডুবে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অপর একটি ট্রলার ৩ জেলেকে উদ্ধার করে। ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর অন্য দুটি ট্রলার নিখোঁজ ৭ জেলেকে উদ্ধার করে ঢালচর এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খরচির চর এলাকার একই জায়গায় উৎপল মাঝি, স্বপন মাঝি, বাকের মাঝি ও আব্দুল হান্নান মাঝির ট্রলারসহ ৪টি ট্রলার ডুবে যায়। এসময় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝিমাল্লারা সাগরে বয়া ধরে ভেসে থাকে। ঘণ্টাখানেক পর অপর দুটি ট্রলার তাদের উদ্ধার করে। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের স্বজনরা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া অনেক জেলে এখনো ফেরত আসেনি। এবং মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় কোনো খোঁজখবর পাচ্ছে না তারা।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চরফ্যাশন ও মনপুরার ৫টি জেলে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে এবং ট্রলারে থাকা জেলের উদ্ধার করা হয়েছে।

অপরদিকে গত তিন দিন ধরে প্রবল বর্ষণ এবং বাতাসে ভোলার জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সবজি সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেকাংশে বেড়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছে পুরো জেলার মানুষ। সাগর ও মেঘনা মোহনা চরম উত্তাল থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে ভোলার সাথে অভ্যন্তরীণ লঞ্চ যোগাযোগ মাধ্যম।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত শনিবার থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ভোলার অভ্যন্তরীণ চার রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের লঞ্চণ্ডসিট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

যেসব রুট বন্ধ ঘোষণা করা হলো- ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট, হাকিমুদ্দিন-আলেকজেন্ডার, তজুমদ্দিন-মনপুরা ও বেতুয়া-মনপুরা।

বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করে বলেন, ওই চারটি রুট ডেঞ্জার জোনের আওতায় থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও সিট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে।

এছাড়া টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলা ভোলার জনজীবন। এতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ।

ভোলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মনির হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে বিরাজমান এ অবস্থা আরো দুই দিন থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতে এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিচু এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।