কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২০১৫ সালে যাত্রীবাহী একটি নৈশকোচে পেট্রলবোমা হামলায় ৮ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী (চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি) মো. মুজিবুল হক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গত বুধবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলী আদালতে মামলার আবেদন করেন ওই বাসের মালিক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের জামমুড়া গ্রামের মৃত আফজ উদ্দিনের ছেলে মো. আবুল খায়ের। আদালতের বিচারক আবু বকর ছিদ্দিক অভিযোগটি আমলে নিয়ে এফআইআর করার জন্য চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহন এলাকায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের বাদী আবুল খায়েরের মালিকানার একটি যাত্রীবাহী নৈশকোচে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৪৮) পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসে থাকা ৮ জন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন। এ ঘটনার পরদিন বাসটির চালক-সহযোগী ও বিভিন্ন মাধ্যমে বাদী জানতে পারেন, সাবেক এমপি মো. মুজিবুল হক, সাবেক আইজি শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী ও চৌদ্দগ্রাম থানার ওৎকালীন ওসির মদদে আসামিরা তার বাসটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে দেয়। মামলায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদী সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নিজেরা এ ঘটনা সংঘটিত করে উলটা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা প্রয়াত এম কে আনোয়ার, রুহুল কবির রিজভী, মনিরুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও তৎকালীন বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ নিরপরাধ লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ওই ঘটনায় সাবেক এমপি মুজিবুল হক তাকে (আবুল খায়ের) চৌদ্দগ্রাম আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ডেকে নেন এবং মামলাটির বাদী হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
তিনি সম্মত না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। এতে তিনি নিরুপায় হয়ে এনআইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) আনার জন্য বাড়ি যেতে হবে বলে সেখান থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরে মুজিবুল হকের নির্দেশে তার (বাদী) উত্তরা মোটর্সের পাঁচটি গাড়ি নিয়ে আটকে হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ হওয়ায় তিনি মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে এফআইআর করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।