প্রশাসন সংস্কারে রদবদল
সাত সচিব পদ খালি, পদোন্নতি চান ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফারুক আলম
জনপ্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশ সচিবালয়। সরকারি চাকরিতে কর্মরত প্রশাসনের সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিবসহ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন এবং শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয় সচিবালয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সুবিধাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন, অফিস চলাকালীন প্রায় প্রতিদিন সচিবালয় অঙ্গনে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন। এরমধ্যেই রাজধানীসহ সারা দেশে প্রশাসনিক কাজের গতি আনতে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে চলছে রদবদল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশাসনে সংস্কারে পদগুলোতে চলছে রদবদল। সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে অনেককে। কাউকে আবার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে দেশের ৫৯ জেলায় ধাপে ধাপে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে সচিবালয়ে হট্টগোল করেন উপসচিব পর্যায়ের একদল বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা। এতে নয় জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। প্রতিবাদের মুখে ১১ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে ৯ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। ওইদিন লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগও বাতিল করা হয়। যদিও পরে তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
এবার যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি চান প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা। গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঞ্চিতরা জানান, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় পদোন্নতি দেয়া হলেও আমাদের দেয়া হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিন বলেন, আমরা বিসিএস ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডারের ১৯৪ জন বঞ্চিত উপসচিব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেছি। কিন্তু পদোন্নতি দেয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে যারা উপসচিব হয়েছিলেন তারা অনেকেই যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সুবিধাবঞ্চিত দাবি তুলে পদোন্নতি-পদায়নের ক্ষেত্রে অনেকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। ভুল ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পদোন্নতি ও পদায়নের পর ত্রুটি ধরা পড়লে ওই সমস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জনপ্রশাসন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) সুপারিশ করলেও অনেকে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। ৮ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তাদের ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসনে ১৩৫ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জনকে যুগ্মসচিব ও ১২০ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে ১০ জন যুগ্মসচিব, আটজন অতিরিক্ত সচিব ও ছয়জন সচিবকে।
জানা গেছে, যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত, উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে মোট ৪৮২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়। অভিযোগ ওঠে এদের মধ্যে অনেকেই বিতর্কিত কর্মকর্তা। তাদের কেউ কেউ অতীতে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভাগীয় মামলায় পেয়েছিলেন শাস্তি। কেউ কেউ ছিলেন পতন হওয়া আওয়ামী লীগের নানা অপকর্মের সহযোগী। এখন ‘বঞ্চিত’ সেজে অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা এবং রদবদলের কারণে প্রশাসনে সাত সচিব ও সচিব পদমর্যাদার পদ খালি রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (কার্যক্রম বিভাগ), বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যানের (সচিব) পদ খালি রয়েছে।