ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আ.লীগের নেতারা দেশ ছাড়ছেন কোন পথে?

আ.লীগের নেতারা দেশ ছাড়ছেন কোন পথে?

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পর, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আর কেউ কেউ সীমান্তে ধরাও পড়েছেন। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্র থেকে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এরইমধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। এর আগে ৫ আগস্টের পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ আরো অনেকেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তাদের অধিকাংশই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরেও তারা কীভাবে দেশ ছাড়তে পারছে? এদিকে গুঞ্জন রয়েছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ আরো কয়েকজন দেশ ছেড়েছেন। দেশে আছেন এমন আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা- হাসিনার পতনের পরই সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নেন ওবায়দুল কাদের। এরপর সুযোগ বুঝে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পড়েন সাবেক এই মন্ত্রী। অবশ্য একই রকম সুর মিলিয়েছেন সাবেক আরেক মন্ত্রীও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, শুনেছি দলের সাধারণ সম্পাদক এখন দুবাই আছেন। তবে এই গুঞ্জন নিয়ে পাওয়া তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের (তন্ময়), হেলালের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এবং বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়। তথ্য বলছে- তারা এখনো দেশেই আছেন। তবে হাসিনার আরেক আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কিছুদিন আগেই ভারতে চলে যান। এছাড়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করতে চাওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও পাড়ি জমিয়েছেন সিঙ্গাপুরে। হাসিনার পদত্যাগের আগে, অর্থাৎ ৩ আগস্ট রাতেই সপরিবারে এশিয়ার এই দেশটিতে। তাপসের ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) সরকার পতনের কয়েক দিন আগে, ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তিনিও দেশে আছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবার সিঙ্গাপুরে চলে যান। টানা ৩৬ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের কারণে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এমন আরো ডজনখানেক নেতার নাম পাওয়া গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। আরো রয়েছেন, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার এবং ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীও। তবে এই তালিকায় রয়েছে আরো বেশ কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন (নিখিল), ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির (শয়ন), ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী প্রমুখ। এছাড়া পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের কিছুদিন আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর দেশে ফেরেননি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এমন অন্তত ১৩ নেতার নাম জানা গেছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, হাসিনার পতনের খবরে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান অনেক নেতা। বিশেষ করে- সিলেট, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ (হালুয়াঘাট), যশোর অঞ্চল, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকা অন্যতম। সীমান্তের দালালদের মাধ্যমে ভারতে পাড়ি জমাতে তাদের খরচ করতে হয়েছে জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ২৫-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে বিত্তশালী নেতারা দেশত্যাগ করতে পারলেও দেশেই আটকা পড়েছেন অনেক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে তৃণমূলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী রয়েছেন আত্মগোপনে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত