দীপু মনিকে আদালতে হাজির করা যায়নি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শওকত আলী, চাঁদপুর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চাঁদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাধর মন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩টি মামলা দায়ের করা হয় চাঁদপুর আদালতে। এসব মামলায় তাকে গতকাল বুধবার চাঁদপুর আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু দীপু মনিকে হাজির করার বিষয়ে সকল প্রস্তুতি প্রশাসন গ্রহণ করে থাকলেও শেষ পর্যন্ত হাজির করা সম্ভব হয়নি। গতকাল বুধবার আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, আদালতের বাহির এবং ভেতরে শত শত বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি মারাত্মক উত্যপ্ত। দীপু মনিকে ঢাকার আদালতে হাজির করার ফলে আদালত এলাকায় যে উত্যপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ ও ঘটনা ঘটেছে, তার চাইতে ও বেশি খারাপ অবস্থা বিরাজ করছিল চাঁদপুর আদালতে। ঢাকার চাইতে ও ভয়াবহ অবস্থা ছিল চাঁদপুর আদালত প্রাঙ্গণে।

বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগে বঞ্চিত নেতাকর্মীরাও আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। সকলের মধ্যে বিগত ১৭ বছর দীপু মনির দ্বারা তারা যে চাঞ্চনা-বঞ্চনা ও তাদের স্বজনদের হত্যার বদলা নিতে তারা মরিয়া হয়েছিল দীর্ঘদিন যাবত। দেখা গেছে তাকে হাতের কাছে না পেলেও তারা তাকে বিভিন্নভাবে ও জুতা নিক্ষেপের প্রস্তুতিও ছিল। যার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিত হয়তো সামাল দেয়া সম্ভব হতো না। এ সব বিবেচনায় রেখে হাজির করা হয়নি দীপু মনিকে। এর কারণ হিসেবে আইনজীবীসহ ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হয়- বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যাসহ নানা ক্ষোভের কারণে আদালতে আনা হলে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ হতে পারে। গতকাল দীপু মনিকে চাঁদপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়নি বলে আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সলিম উল্যাহ সেলিমসহ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। চাঁদপুর সদর মডেল থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ডা. দীপু মনিসহ আওয়ামী লীগ ও তার সিন্ডিকেটের লোকদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চাঁদপুর সদরে ৩টি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুকবুল হোসেন এবং অপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন। প্রথম মামলাটি হচ্ছে গত ১৮ জুলাই চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের জেএম সেনগুপ্ত রোডের বাসা মনিরা ভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় দীপু মনি ও তার ভাই জেআর ওয়াদুদ টিপুকে হুকুমের আসামি করে এ মামলা করা হয়েছিল । চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় দীপু মনি, তার ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু ও ড. সেলিম মাহমুদসহ ৬২৪ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়। মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুরুল ইসলাম খান। তৃতীয় মামলাটি হচ্ছে, চাঁদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের সড়ক ভবন এলাকায় বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেন মোক্তার আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। দীপু মনিকে চাঁদপুর আদালতে হাজির করা প্রসঙ্গে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী সলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, তিন মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য দীপু মনিকে চাঁদপুর আদালতে আনার কথা ছিলো। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি ও তার সিন্ডিকেট মানুষকে অনেক হয়রানি করেছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা অপেক্ষায় আছে কবে তাকে আদালতে হাজির করা হবে। তবে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ হতে পারে এমন শঙ্কায় চাঁদপুর আদালতে হাজির করার তারিখটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দীপু মনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে চাঁদপুরে বিএনপি-জামায়াতের ২৩ জন লোক তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় পুলিশের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। সেসব লোকদের পরিবারের সদস্যরা বিচার, অত্যাচার, দুর্নীতি ও সীমালঙ্ঘনের জন্য তাকে খুঁজছে। একই সঙ্গে দীপু মনি চাঁদপুরের রাজনীতির সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন। এ ছাড়া প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগের লোকজনের তাকে খুঁজছে এসব প্রশ্নের জবাব ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।