খালেদা জিয়া খুব বেশি সুস্থ নন

মির্জা ফখরুল

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘খুব বেশি সুস্থ’ নন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া খুব সুস্থ নন। গতকাল (শুক্রবার) ওনার টেম্পারেচার ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য কবে বিদেশে নেয়া হবে? এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তাকে ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ফিট টু ফ্লাইং, এটা মনে করছেন না। সেজন্য বিদেশে যেতে ওনার বিলম্ব হচ্ছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলেও চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন বাসায়। অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার, সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডন জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে এর বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনীতি নয়, সিট দখল কালচার বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা ভালো হয়নি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান হতে পারে না। এসব সিদ্ধান্ত সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে রাজনীতি টিকে থাকবে না।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের একেবারে বিরোধিতা করি। হলে সিট দখল বন্ধ করতে হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা দায়িত্বেই থেকে গেছে। পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের পর বর্তমান সরকারের যে ল্যাকিং তা হলো সরকারে রাজনৈতিক মুখ নেই। নিঃসন্দেহে কিছু পলিটিক্যাল গ্যাপ তৈরি হতে পারে।’ বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটুকু কাজ হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করি। মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বসতে হবে। কথা বলতে হবে। মানুষ প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন দেখতে চায় তা কথা বলে জানতে হবে। রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’ পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের দুটি জেলায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ইউনিভার্সিটিতে যেটা ঘটেছে সেটাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এখানে বিরাজনীতিকরণের আভাস আছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করছে, সে কারণে এখানে আরো উসকানি আছে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অভিজ্ঞতার সংকট এখানে একটা কারণ।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যৌক্তিক সময় বলতে যত দেরি হবে ততই সমাজ ও দেশের ক্ষতি হবে। রাজনৈতিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। গণহত্যার সহকারীদের রেখে কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না। ঘাড়ে ধাক্কা না দিলে দেশে কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়নি।’ রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় কমিশন সংস্কারের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া উচিত। তারা যেটা করছেন সেটা সফল হোক আমরাও চাই, কিন্তু ব্যর্থ হবারও সুযোগ থেকে যাবে।’ সংবিধান পরিবর্তনের মতামত নেয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তনের আগে মানুষের মতামত নিয়ে তারপর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আইনগত দিক দেখতে হবে। নির্বাচনের পর সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এই সংবিধানের অধীনে শপথ না নিলে তারা সংবিধান পরিবর্তনের কথা বললে বেশি যৌক্তিক হতো।’