সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব চেয়ে বহুবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীরা সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা করেননি, সম্পদের হিসাব দিতে তাদের মাঝে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে এবারো সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদণ্ডবিবরণী দাখিল করবেন। গেজেটেড/নন-গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীরা (দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সম্পদণ্ডবিবরণী দাখিল করবেন।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব জমাদান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। আর আগামী বছর থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে। সম্পদের ভুল তথ্য দিলে বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি হবে। তিরস্কার থেকে শুরু করে পদোন্নতি আটকে যাওয়া, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর বা চাকরি থেকে অপসারণের মতো ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিল করা এখন থেকে বাধ্যতামূলক। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণবিধি ১৯৮৯ অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিলগালা খামে করে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। সম্পদের তথ্য জমা না দিলে অথবা ভুল বা মিথ্যা হিসাব জমা দিলে লঘু ও গুরুদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। লঘুদণ্ডের মধ্যে প্রথমে রয়েছে তিরস্কার করা। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতি হবে না, আর্থিক ক্ষতি আদায় করা হবে। গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে পদ থেকে নিচে নামিয়ে দেয়া, চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর ও অপসারণের মতো পদক্ষেপ। তিনি আরো বলেন, যারা ফাইনানসিয়াল জায়ান্ট হয়ে গিয়েছিল তারা সতর্ক হবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।
মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (৩০/১২/২০০২ তারিখের সংশোধনীসহ)-এর বিধি-১৩ অনুযায়ী সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদণ্ডবিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদণ্ডবিবরণী দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় তথ্য। তাই এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করেন মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, আগে পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার বিধান ছিল। এখন প্রতি বছর সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীর সবাইকে সম্পদের হিসাব জানাতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদণ্ডবিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। সম্পদণ্ডবিবরণীটি সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
সম্পদণ্ডবিবরণীতে কী কী তথ্য উল্লেখ করতে হবে সে বিষয়ে একটি ফরমেট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শিগগিরই জারি করা হবে বলে জানান সিনিয়র সচিব।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেয়ার নিয়ম। দুর্নীতি রোধ এবং চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণবিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও কাগজের এই নিয়ম মানা হয় না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি। সরকারি চাকরিজীবীদের একটি অংশের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা আছে। এ অবস্থায় তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ এসেছে। সেজন্য প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী সরকারের কাছে জমা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা পুরোটাই গুজব উল্লেখ করে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
