সুসংবাদ প্রতিদিন
মাছ চাষে পাল্টে যাচ্ছে পাহাড়ি জনপদ
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রঞ্জন কৃষ্ণ পণ্ডিত, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রাম। চারিদিকে শাল-গজারির মাঝে মাঝে আনারস, পেঁপে ও কলাবাগান। এরই মাঝে রয়েছে নিচু ফসলি জমি।
এ এলাকাটি পুরোপুরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত। এসব এলাকার নিচু ধানি জমিকে স্থানীয়রা বাইদ নামে অভিহিত করে। পূর্বে এসব জমিতে বছরে দুবার আউশ ও আমন ধান চাষ হতো। আর দুটি ফসলের আয় দিয়ে এসব এলাকার আদিবাসী গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করতো।
নিজেদের ভাগ্য বদলাতে নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর এসব লোকজন শিং মাছ চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন। তারা পীরগাছা গ্রামের বাইদে ছোট ছোট পুকুর তৈরি করে হাইব্রিড জাতের শিং মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন। প্রথমদিকে ওই এলাকার যুবক পিজং নেংমিঞ্জা মাছ চাষ শুরু করেন। দশ মাসে ওই মাছ চাষে তার খরচ হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তিনি ৩১ লাখ ৬ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন। তার সফলতা দেখে স্থানীয়দের মধ্যে মাছ চাষের আগ্রহ বাড়ে এবং বর্তমানে প্রায় ৫০ জন আদিবাসী ওই মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন।
স্থানীয় লরেন্স নকরেক ৭ বিঘা, তাপস স্নাল ১ বিঘা, হারমা নকরেক ৩ বিঘা, পুনম তিগিদি ২ বিঘা, রত্ন মৃ ৩ বিঘা, ভরত চাম্বুগং ২ বিঘা, দমিনিক মৃ ৬ বিঘা, নিঠুন রংমা ২ বিঘা, পিরিন নকরেক (মাস্টার) ১৪ বিঘা, সবি সাংমা ২৫ বিঘা এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা উইলিয়াম দাজেল ৩ বিঘা নিচু বাইদে শিং মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন। তারা জানান, এসব নিচু জমিতে প্রতিবছর ২ বার ধান চাষ করতে পারতেন। টানা বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো বছর সঠিকভাবে ওই ধান ঘরে তুলতে পারতেন না। ভাগ্য প্রসন্ন হলে দুবার ধান পেলে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব ছিল। আর শিং মাছ চাষ করার ফলে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করেছেন। তাদের সংসারে এখন আর অভাব অনটন নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন।
মৎস্যচাষি সবি সাংমা জানান, বর্তমানে তাদের সফলতা দেখে অনেকেই এসব কাজে ঝুঁকছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ২০০ থেকে ২৫০ মণ মাছ উৎপাদন হয় এবং প্রতিমণ মাছ ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস তদারকি করলে তারা আরো সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
মধুপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান জানান, মধুপুরের পাহাড়ি জনপদের নিচু জমিতে স্থানীয় আদিবাসী যুবকরা হাইব্রিড জাতের শিং মাছ চাষ করছেন।
তারা মাছের বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগবালাই থেকে মাছকে মুক্ত রাখতে এবং পুকুরের নানা সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই পরামর্শ নেন। আদিবাসী যুবকদের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি আরো জানান, দেশের মৎস্য চাহিদা মেটাতে তারা প্রায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টন মাছের যোগান দিচ্ছে।