ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

মাচায় তরমুজ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক

মাচায় তরমুজ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রথমবারের মতো মালচিং (মাচায়) পদ্ধতিতে তরমুজ চাষাবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার বীরগাঁও, নাটঘর, বগডহর এলাকায় প্রায় দুই হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে।

চারদিকে সবুজের সমাহার, সবুজের মাঝে হলুদ রংঙের তরমুজ। এমন দৃশ্য নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও, নাটঘর, বগডহর এলাকায়। (FREAP) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ এই প্রথম চাষাবাদ করা হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে পোকামাকড় আর গাছের গোড়ায় আগাছা হয় না। এতে বাড়তি পরিচর্যা করতে হচ্ছে না চাষীদের। একই জমিতে বছরে তিনবার এই তরমুজ চাষাবাদ করা যায়। দ্রুত সময়ে তরমুজের ফলন ভালো হয়। তরমুজ অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভজনক ও বিক্রিতে ঝামেলা না থাকায় দিন দিন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

তরমুজ চাষে বীজসহ সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি অফিস। এরই মধ্যে জমি থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। সাধারণত শীতকালে চাষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসে জমি থেকে তরমুজ উত্তোলন করা হতো।

বর্তমানে উন্নতমানের কৃষি প্রযুক্তির ছোয়ায় সারা বছরই তরমুজ চাষাবাদ করা যাচ্ছে। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফসল।

নাটঘর ইউনিয়নের বড়হিত গ্রামের কৃষক শামীম আহমেদ জানান, প্রথমবারের সূর্যডিম জাতের তরমুজ আবাদ করেছি। ২০ শতক জমি থেকে এরই মধ্যে ৯২ হাজার টাকা তরমুজ বিক্রি করেছি। আরো ৫০ হাজার টাকা বিক্রয় করার সুযোগ আছে। অতি অল্প সময়ে এই ফসল আবাদে অনেক কৃষকের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপসহকারী কৃষি অফিসার নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে। উপজেলার বগডগর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম জানান, পরিত্যক্ত অনাবাদি জায়গায় কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ করেছি। এই সময়ে তরমুজ চাষ করা, এই ধারণাই আমার জন্য নতুন। এখন পর্যন্ত ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে আরো জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করবো। নবীনগর পূর্ব ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবু নোমান জানান, সূর্যডিম ও বাংলালিংক জাতের তরমুজের চাহিদা বােড়ছে। পুকুরপাড়, পরিত্যক্ত জায়গায় আবাদের জন্য আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। অসময়ে এই ধরনের চাষাবাদে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি তরমুজ ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের হচ্ছে। এই তরমুজের বাজারমূল্য বেশ ভালো। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপজেলায় এই বছর প্রায় ২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি জলবায়ুর সঙ্গে অভিযোজন করে এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই তরমুজ বিক্রয় উপযোগী হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ কৌশল সম্পর্কে কৃষি বিভাগ মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে কলমে শিখিয়ে দিচ্ছি। বর্তমানে এটি টেকসই আবাদ হিসেবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

তিনি জানান, কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বীজ, মালচিং পেপার ও পরিচর্যা বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সব ধরনের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। তাই উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত