ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাইডেনের কূটনৈতিক ব্যর্থতা

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাইডেনের কূটনৈতিক ব্যর্থতা

গাজা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রচেষ্টা এখনও স্থবির হয়ে আছে। ইরান সমর্থিত হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা অব্যাহত রেখেছে। আর অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।

মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগের আগে এই সংকটের সমাধান হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির সব সাফল্য মলিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত এক বছর ধরে ইসরায়েলের সব কার্যকলাপের অন্যতম সমর্থক ছিলেন বাইডেন। ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সাফাই গাইলেও মধ্যপ্রাচ্যে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ও সম্ভাব্য আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রতিরোধেও বেশ উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি।

কিন্তু প্রতিবারই তার প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো, লেবানন সীমান্তে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব নাকচ করে উলটো হামলা জোরদার করা।

মধ্যপ্রাচ্যে দায়িত্ব পালন করে আসা সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেছেন, ‘এই অঞ্চলে মার্কিন ক্ষমতা ও প্রভাবের সীমাবদ্ধতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

এর একটা প্রমাণ হতে পারে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ওয়াশিংটনের মর্জিতে টলানোর জন্য বাইডেনের ব্যর্থতা। বরং এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা ও জাতিসংঘের ঢাল হিসেবে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রায় এক বছর ধরে চলা গাজাযুদ্ধ নিরসনে ইসরায়েল ও হামাসকে সমঝোতায় আনার মার্কিন প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এই বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা বলেছেন, আশু কোনো সম্ভাবনার আশা দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ মার্কিন কর্মকর্তা যুদ্ধবিরতি অর্জনে ব্যর্থতার পুরো দায় চোখের পলকে হামাসের ওপর চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। অবশ্য নেতানিয়াহুর একতরফা দাবি-দাওয়াকেও সমস্যার কারণ বলে মনে করে থাকেন কয়েকজন। গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ বার মধ্যপ্রাচ্যে সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবারই তিনি তীব্র মতবিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন।

গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন গাজায় সামরিক অভিযানে বিরতি দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন ব্লিঙ্কেন, যেন ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু তার কিছু পরেই নেতানিয়াহু টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল তার ‘সব শক্তি’ নিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখবে।’ এই প্রতিবেদন করার জন্য হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বিবৃতির অনুরোধে সাড়া দেয়া হয়নি।

এই সংকটের মধ্যেই মাথাব্যথার নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে লেবাননে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলা। অস্থিরতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই বাইডেনের প্রস্তাবে কর্ণপাত করেন কি না নেতানিয়াহু, এখন সেটিই দেখার বিষয়। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা বাইডেন ব্যর্থ প্রতীয়মান হলেও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা চেষ্টায় তার প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই বলে বিশ্লেষকরা অভিমত দিয়েছেন। চলমান এই সংকটের বোঝা তার উত্তরসূরিকেও বহন করতে হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত