বিশেষজ্ঞ অভিমত
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ছয় রূপরেখা
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
যানজটে বিপর্যস্ত রাজধানীবাসী। অসহনীয় এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানামুখি উদ্যাগ নিয়েছে। এর মধ্যে সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে দায়িত্ব দেয়া হয় বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ছয় দফা রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রয়োজন গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করা। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা। সংকট নিরসনের পথ খুঁজতে স্বল্প খরচ ও দেশিয় বিশেষজ্ঞদের ওপর ভরসা করছে সরকার। এরই মধ্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ছয় দফা প্রস্তাবনা। পরিকল্পনা আছে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট মোড় থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে তা কার্যকরের।
ছয় রূপরেখায় বলা হয়েছে- ১. প্রধান সড়ক থেকে নিবন্ধনহীন রিকশা, অটোরিকশা ও ইজি বাইক অপসারণ। ২. ট্রাফিক পুলিশকে আইন প্রয়োগে সক্রিয় করা। ৩. প্রতিটি রাস্তার মোড়ের ৫০ মিটার ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কে ১০০ মিটারের মধ্যে যানবাহন পার্কিং না করা। ৪. নির্ধারিত স্থানে সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠাণ্ডনামা নিশ্চিত করা। ৫. কম ব্যস্ত সিগনালে ২ থেকে ৩ মিনিট এবং ব্যস্ত সিগনালে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সিগনালসাইকেল নিশ্চিত করা। ৬. তাৎক্ষনিক সমস্যা সমাধানে ৬ থেকে ৮ টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক মনিটরিং টিম গঠন করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিদিনের প্রায় ২ কোটি ট্রিপের ৭০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে বাসে। রাষ্ট্রের একক মালিকানায় চালাতে হবে সব বাস। তারা আরো বলেন, সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বাস। যে বাসগুলো রুট পারমিট নেই সেই বাসগুলোকে রুট থেকে বের করে দিতে হবে। যে বাসগুলো চলার উপযোগী সরকারকে সেগুলো নিয়ে প্রথমে কাজ করতে হবে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ হবে এবং বাসের মান পরিবর্তন হবে, আলাদা লেন থাকবে। চাইলে সিগনালে তাদের প্রায়োরিটি দেয়া হবে। তখন বাসগুলোকে একটা শৃঙ্খলায় আনা যাবে। আর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, যানজটে রাজধানীতে বছরে আর্থিক ক্ষতি অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা। পরিস্থিতির উন্নতি হলে যার অনেকটাই সাশ্রয় হবে। স্বস্তি মিলবে নগরজীবনেও।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ রেখেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা আছে সেখানে ব্যাকরণ কাজ না করে আধুনিক কিছু চাপানো যাবে না। আমরা যেটি চিন্তা করছি সেটি হচ্ছে অনেকটা সেমি-অটোমেটেড। ফ্লেক্সিবল সিগনাল লাইট বলছি। এখানে অটোমেশন থাকবে আবার সেই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ম্যানুয়ালি এর টাইম পরিবর্তন করতে পারবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, যখন মানুষ সিগনালে অভ্যস্ত হবে তখন একজন কনস্টেবল পুরো ট্রাফিক সিগনালটা কন্ট্রোল করতে পারবে যেখানে বর্তমানে পাঁচজন কাজ করে। তবে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাকি চারজন অন্য বাকি কাজগুলো দেখভাল করতে পারবে। তখন মানুষ ইচ্ছা করে সিগনাল অমান্য করবেন না। পুলিশ আইন প্রয়োগ করে কখনই ট্রাফিক সিস্টেম উন্নত করতে পারবে না। চালক এবং যাত্রী যদি আইন মানে তখন পুলিশের পক্ষে আইন প্রয়োগ করতে সুবিধা হবে আর ট্রাফিক সিস্টেমও উন্নত হবে।