রংপুর বিভাগে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি মৌসুমেই ২৫৩ জনের আক্রান্ত খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সব থেকে বেশি আক্রান্ত কুড়িগ্রাম জেলায়। পরের অবস্থান নীলফামারী আর তৃতীয় স্থানে রংপুর। তবে, মৃত্যুর খবর নেই। এই অবস্থায় মশা নিধনের খুব একটা তোরজোড় নেই। রংপুর সিটিতে কমপক্ষে ১২ ড্রাম ওষুধের প্রয়োজন হলেও মাত্র আড়াই ড্রাম ওষুধে দায় সারছে নগর ভবন, চরম সংকট রয়েছে ফগার মেশিনেরও।
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভাগের ৭ জেলায় ১৯৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৬ জন।
সূত্রটি জানায়, এ বছর রংপুরের আট উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ জন, ২৩ জন ছাড়পত্র নিলেও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১১ জন। লালমনিরহাট জেলায় ১৬ জন আক্রান্ত হলেও ১৩ জন ছাত্রপত্র নিয়েছেন। তিনজন আছেন চিকিৎসাধীন। কুড়িগ্রাম জেলায় ৮৯ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮০ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৯ জন। নীলফামারীতে ৪১ জন আক্রান্ত হলেও ছাত্রপত্র নিয়েছেন ৩২ জন, ভর্তি আছেন ৯ জন দিনাজপুরে আক্রান্ত ২৫ জন, ভর্তি আছেন ৬ জন। বাকিরা ছাত্রপত্র পেয়েছেন। গাইবান্ধায় ১২ জন আক্রান্ত হলেও সুস্থ্য হয়ে ফিরেছেন ৪ জন, চিকিৎসাধীন আছেন ৮ জন। পঞ্চগড়ে আক্রান্ত ২৮ জন, ছাত্রপত্র নিয়েছেন ২৩ জন আর চিকিৎসাধীন আছেন ৫ জন। দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন আর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন ৩ জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু ভয়াবহ রকমভাবে ছড়িয়ে পড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা নেই। এই কারণে এবছর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা বেশি। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) বর্জ্য শাখা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটিতে মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। ওষুধ সংকটের কারণে পুরো সিটিতে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আপৎকালীন হিসেবে পুরোনো ১৫টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলছে। তাও পুরোদমে নয়।
সূত্রটি জানায়, পুরোনো ১৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চালালেও ওষুধের প্রয়োজন কমপক্ষে ১২ ড্রাম। একেকটি ড্রামে ওষুধ থাকে ২০০ লিটার। সেখানে মাত্র আড়াই ড্রাম ওষুধ নিয়ে কার্যক্রম চলছে। একই সঙ্গে তিনটি ভাগে ভাগ করে এই কার্যক্রম চললেও ফগার মেশিনের সংকট রয়েছে। মাত্র ১২টি ফগার মেশিন রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়।
সেখানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, যে ওষুধ আর যে ফগার মেশিন রয়েছে তা দিয়ে মূলত দায়সারা কাজ চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ জনবল ও ফগার মেশিন না থাকলে কোনোভাবেই মশক নিধন সম্ভব নয়।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন, রসিক সদ্য বিদায়ী প্যানেল মেয়র মাহবুববার রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, আমাদের বরাদ্দ নেই। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মশক নিধনের। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। ওষুধের অর্ডার আছে সেগুলো হাতে পেলেই সংকট কেটে যাবে। এই মহুর্তে যা আছে তা দিয়ে সংকট মোকাবেলা সম্ভব বলে তিনি জানান। গতকাল রোরবার বিকালে রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, চলতি বছর কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। গত শনিবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ১০ জন, এর মধ্যে বাড়িতে ৬ জন হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হারুণ অর রশীদ জানান, পুরো বিভাগে কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। এসব বিষয়ে প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকমúেøক্সে নির্দেশনা দেয়া আছে।